সন্তান প্রসবে সিজারিয়ান কমায় মিসোপ্রোস্টল ও ফলিস ক্যাথেটর

প্রসব জটিলতায় ভুগছেন এমন নারীদের মিসোপ্রোস্টল জুস এবং ফলিস ক্যাথেটর পদ্ধতি প্রয়োগ করে সিজারিয়ান অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে এক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, প্রসবের আগেই পানি ভেঙে যাওয়া, সংকুচিত জরায়ুসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন এমন গর্ভবতীদের ৫০ শতাংশের অধিক সিজারিয়ান ছাড়াই বাচ্চা প্রসব করানো সম্ভব। যদি মিসোপ্রোস্টল জুস এবং ফলিস ক্যাথেটার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের করা এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী।

তিনি জানান, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এই দুই বছরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গর্ভবতীদের মধ্যে ২০০ জনকে জরিপের আওতায় আনা হয়। যাদের মধ্যে ১০০ জন মিসোপ্রোস্টল গ্রুপে এবং বাকি ১০০ জন ছিল ফোলিস ক্যাথেটর গ্রুপে। জরিপে অন্তর্ভুক্ত নারীদের ১৪৮ জনই গৃহীণি এবং ১৮ জন ছিলেন কর্মজীবী।

জরিপে দেখা গেছে, মিসোপ্রোস্টল জুসের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের হার ছিল ৬৪ শতাংশ এবং ফলিস ক্যাথেটর ব্যবহার করে ৫৮ শতাংশ ভ্যাজেইনাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয়েছে। আর মিসোপ্রোস্টলের অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ এবং ফলিস ক্যাথেটরদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সিজারিয়ান করাতে হয়েছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ বছরের কম বয়সী ছিলেন ১৮ জন, যাদের ৪ জনকে শুধু মিসোপ্রোস্টল এবং ১০ জনকে মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলিস ক্যাথার্টার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১১৪ জন গর্ভবতীদের মধ্যে ৬৪ জন মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলিস ক্যাথেটর এবং ৫০ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫৪ জনের মধ্যে ২২ জনকে মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলিস ক্যাথেটর এবং ৩২ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন মিসোপ্রোস্টল জুস ও ফোলিস ক্যাথেটর এবং ১০ জনকে মিসোপ্রোস্টল প্রয়োগ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী বলেন, সিজারিয়ান সেকশন কমাতে হলে ইনডাকশন জরুরি। ইনডাকশন দুইভাবে করানো যায়, কোন দক্ষ লোক দিয়ে এই পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসব করালে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে অদক্ষ লোকের ক্ষেত্রে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি গর্ভবতীকে ভ্যাজেইনাল ডেলিভারি জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতকরণ এবং কাউন্সিলিং করতে হবে। এছাড়া গর্ভধারণের পর থেকে কমপক্ষে ৪ বার চেকআপ করানো ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

সিজারিয়ান সম্পর্কে তিনি বলেন, সিজারিয়ান যে একেবারেই হবে না বিষয়টি তা নয়। যাদের প্রয়োজন হবে তাদের অবশ্যই সিজারিয়ান করাতে হবে। ইদানিং অনেকেই কষ্ট এড়াতে স্বেচ্ছায় সিজারিয়ানে ঝুঁকছেন। এই চিন্তা-চেতনা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া সিজারিয়ানের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে।

এ সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান বলেন, সিজার বেড়ে যাওয়াটা খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার। তবে এর চেয়েও এলার্মিং পর্যায়ে আছে আমাদের মাতৃমৃত্যু। এখনও আমাদের এক লাখ মায়ের মধ্যে প্রসবকালীন সময়ে ১৩৭ জনের মৃত্যু হচ্ছে। অথচ এই মৃত্যুগুলো কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য। যারা মারা যায়, তাদের মধ্যে অনেকেই দেখবেন ইনফেকশনে মারা যাচ্ছে, অনেকেই প্রসবকালীন সময়ের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মারা যাচ্ছে। এসব মৃত্যুর পেছনে অন্যতম কারণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি না হওয়া। বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো হলেও আমরা চাই শতভাগ ডেলিভারি হোক প্রাতিষ্ঠানিক। মায়েরা যদি প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারিটা নিশ্চিত করে, আমাদের মাতৃমৃত্যুও কমে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ