রে‌মিট্যান্সের গ‌তি কমছে, ২২ দিনে এলো ১০৫ কোটি ডলার

ব্যাংকিং চ্যানেলে ও বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। আগস্ট মাসের ধারাবাহিকতায় চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও নিম্নগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রবাসী আয়ে।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে দৈনিক আসছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫২ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪৪ কোটি ডলার। যা আগের মাসের চেয়ে ১৬ কোটি ডলার কম হবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার; যা ছিল তার আগের ছয় মাসে সর্বনিম্ন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোলা মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বেশি। যে কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে আনুষ্ঠানিক বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স। কেননা এই সূচকের বাড়া-কমার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে রিজার্ভের উত্থান-পতন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের ২২ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। আগস্টে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার।

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

রেমিট্যান্স-রপ্তানি ডলারের এক রেট

রেমিট্যান্স ও রপ্তা‌নি আয়ে ডলারের মূল্য এখন থেকে এক রেটে ধরা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিকারকরা প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পা‌চ্ছেন। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আ‌য়ে ডলারের মূল্য ৫০ পয়সা বা‌ড়ি‌য়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকায়।

তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহক‌দের গুণ‌তে হচ্ছে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকায়। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা পর্যন্ত।

ডলার রেটসহ সমসাময়িক অর্থনীতির বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা। বৈঠকে বিএবির পক্ষ থেকে ডলার রেট বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে তাতে সায় দেয়নি গভর্নর। ব্যাংক উদ্যোক্তাদের জানানো হয় বর্তমানের মূল্যস্ফীতি চাপ নিয়ন্ত্রণ এখন ডলার দাম বাড়ানো সম্ভব নয়।

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স। কেননা এই সূচকের বাড়া-কমার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে রিজার্ভের উত্থান-পতন।

প্রকৃত রিজার্ভ ২১.৪৫ বিলিয়ন ডলার

চলতি মাসের শুরুতে অর্থাৎ গত ৫ সেপ্টেম্বর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৩১৮ কোটি ডলার। এরপর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই ও আগস্ট মাসের আমদানি বিল ১৩১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। এসময় রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক নিয়মে আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় দুই হাজার ১৪৫ কোটি ডলারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ দুই হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ