চৈত্রের কাঠফাটা রোদ। সূর্যের প্রখোর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে পরেছে। মাঝে মাঝেই ঘূর্ণি হাওয়ায় উড়ছে ধুলো। ভরদুপুরে যেনো ঘন কুয়াশার আবরণ। এমনইভাবে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাস্তা থেকে সৃষ্ট ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় ধুলাবালির পরিমাণও বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। অথচ ধুলাবালি নিরসনে কর্তৃপক্ষের নেই তেমন কেনো উদ্যোগ।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল অভিমুখের রাস্তা এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের অভিমুখের রাস্তা যেন ধুলার রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে এসব রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক খানাখন্দ। আর এসব খানাখন্দ ইটের খোয়া আর বালি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। নিয়মিত পানি ছিটিয়ে না দেওয়ায় এসব জায়গা থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে ধুলাবালি।
প্রচন্ড ধুলাবালির কারণে ক্যাম্পাসে বেড়েছে এলার্জি সমস্যা অভিযোগ রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বিথির। তিনি বলেন, নিকাবের নিচে দুইটি মাক্স ব্যবহার করেও ধুলাবালির কারণে প্রতিনিয়ত হাঁচি কাশির জন্য নাক-গলা ব্যাথাসহ ইনফেকশন হচ্ছে। প্রতিদিন ক্লাস থেকে এসে এলার্জিজনিত কারণে ঠিকমতো পড়তে পারছি না। এসব ধুলাবালি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
চারুকলার শিক্ষার্থী তীর্থ কান্তি প্রামাণিক বলেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে প্রচন্ড ধুলাবালির কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক পরে হাটলেও ধুলাবালি থেকে রক্ষার উপায় নেই। বিশেষ করে মাদার বখ্শ হল থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় অনেক বেশি ধুলা। এসব ধুলাবালির জন্য আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে ধুলাবালি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউডের অধ্যাপক ড. আবুল কামাল আজাদ বলেন, এই ধুলাবালির কারণে প্রধান যে সমস্যাটা বেশি দেখা দেয় তা হলো শ্বাসকষ্ট। এছাড়াও যাদের অ্যজমা সমস্যা রয়েছে, তারা যদি এই ধুলাবালিতে চলাচল করে তাহলে তাদের অবস্থা আরো গুরুতর হয়ে যাবে। তাই নির্মাণ কাজের ফলে যে স্থানেগুলোতে ধুলোবালি হচ্ছে তা নিয়মিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তাহলে এর থেকে একটু হলেও আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি।
পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউডের আরেক সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম শফিউজ্জামান বলেন, রাজশাহীর পাশ দিয়েই পদ্মা নদী বয়ে গেছে। যে কারণে এখানো তুলনামূলকভাবে ধুলাবালি অনেকটাই বেশি। ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজের কারণে বর্তমানে ধুলাবালির পরিমাণ অনেকটাই বেশি। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ধুলোবালি আমাদের শ্বাস-নালীতে প্রবেশ করছে। এখন হয়তো আমরা এর ক্ষতিকর দিক বুঝতে পারছি না। ভবিষ্যত এর জন্য আমাদের ভোগ করতে হবে। ক্যাম্পাসে উন্নয়ন কাজ হবে, তবে তা পরিবেশের উপর প্রভাব পরছে কিনা সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ধুলোবালির সমস্যা সমাধানে নিয়মিত পানি স্প্রে করা যেতে পারে। তাতে কিছুটা হলেও আমরা রক্ষা পাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসক ডা. তবিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে চিকিৎসা কেন্দ্রে আসা অন্তত ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী এলার্জি ও অ্যাজমায় আক্রান্ত। ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এসব স্থানে দিনে অন্তত দুইবার পানি ছিটিয়ে দিলে ধুলাবালির সমস্যাটি নিরসন হবে এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলোতে ধুলাবালির সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।