পুরোমাত্রার আধুনিক এক পারমাণবিক যুদ্ধ এবং এর প্রভাবে দেখা দেওয়া দুর্ভিক্ষে বিশ্বে ৫০০ কোটি মানুষ মারা যাবে। প্রাণঘাতী এই বিস্ফোরণে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে। এমনকি বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে ৯০ শতাংশ। এর ফলে পারমাণবিক বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয় ধূলিকণা আর বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বিশ্ব থেকে মানব সভ্যতার অর্ধেক অংশকে একেবারে মুছে দেবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য উঠে এসেছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পুরোমাত্রার পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাব্য ছয়টি দৃশ্যকল্প এঁকেছেন বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে কী ঘটবে সেসম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যদি পুরোমাত্রার পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে এই বিশ্ব মানবতার অর্ধেকের বেশি মানুষ একেবারে নাই হয়ে যাবে।
নেচার ফুড সাময়িকীতে মার্কিন ব্জ্ঞিানীদের গবেষণার এই ফল প্রকাশিত হয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণের কারণে বায়ুমন্ডলে কী পরিমাণ তেজস্ক্রিয় ধূলিকণা প্রবেশ করতে পারে, সেই হিসেব-নিকেশ করে প্রাণহানির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা পূর্বানুমাণ করেছেন। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা কাজে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণা কেন্দ্রের তৈরি জলবায়ু পূর্বাভাসের কাজে ব্যবহৃত একটি যন্ত্রের ব্যবহার করেছেন।
এমনকি তুলনামূলক ছোট-মাত্রার একটি পারমাণবিক সংঘাত হলেও তা বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদনে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের মাঝেও যদি স্থানীয় পর্যায়ে একটি পারমাণবিক সংঘাত ছড়িয়ে যায়, তাহলেও পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রায় ৭ শতাংশ হ্রাস পাবে।
আর এই যুদ্ধ যদি রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুরু হয়, তাহলে বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের উৎপাদন পরবর্তী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ কমে যাবে।
গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত ফসল অথবা খাদ্যের বর্জ্য হ্রাস করা হলে তা সংঘাতের ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা পুষিয়ে উঠতে হয়তো সহায়তা করবে। কিন্তু বৃহৎ আকারের যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই সঞ্চয় খুব বেশি সহায়ক হবে না।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়ার সৈন্যরা। রুশ-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাঝে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এই গবেষণা চালিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, পারমাণবিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষক দলের সদস্য এবং রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের জলবায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালান রোবক বলেছেন, এসব তথ্য আমাদের একটি বিষয়ই বলে… আর সেটি হলো অবশ্যই আমাদের পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে হবে।