আত্মহত্যার আগে ই-কমার্সে ৪৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিল রাবি শিক্ষার্থী

ফেসবুকে সব কষ্টের কথা লিখে আত্মহত্যা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ইশতিয়াক মাহমুদ পাঠান। আত্মহত্যার আগে ই-কমার্সে বিনিয়োগ করা ৪৭ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকার কথাও উল্লেখ করেছেন। এরই মধ্যে ইশতিয়াকের পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার পর কোনো এক সময়ে নিজ বাসায় বিষপান করেন ইশতিয়াক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

ইশতিয়াকের চাচাতো ভাই রুশো জানান, প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ইশতিয়াক। তার বাড়ি যশোরের আরএন রোডে। বাবা সৈয়দ আলী পাঠান ও মা সৈয়দা আমেনা বেগম।

তিনি আরো জানান, আত্মহত্যার পর রুমের দরজা ভেঙে ইশতিয়াককে বের করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে যশোর প্রিন্স হসপিটালে, পরে যশোর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ার পর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ইশতিয়াকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:

‘শুভ সকাল, লেখাটা যখন আপনারা পড়বেন, তখন আমি আপনাদের ছেড়ে অনেক দূরের, না ফেরার দেশের যাত্রী। আমি জানি, আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আমাকে ভালোবাসেন। হয়তো কোন কারণ ছাড়াই বাসতেন। খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম না হয়তো কারোর কাছে। তবে ছিলাম তো?

আবার অনেকেই আছেন যারা আমাকে ঘৃণা করতেন।

কেন করতেন??!

আপনাদের মধ্যেই কেউ একজন আমাকে মাথায় তুলে আবার ছুড়ে ফেলেও দিয়েছেন। তাতেও আমার কারোর বিরুদ্ধে আর কোনই অভিযোগ নেই।

আমার সমস্যা শুধু আমার নিজেকে নিয়ে। নিজের মনটাকে আর বুঝিয়ে রাখতে পারছিলাম না। মনের সাথে যুদ্ধ করে আমি বার বার হেরে যাচ্ছিলাম। রোজই মৃত্য আমাকে তাড়া করছিলো। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না; সেই কবে থেকে। গত কিছুদিন আমি অসহ্য মানুষিক যন্ত্রণা সহ্য করেও বাঁচতে চেয়েছি। ভরপুর বেঁচে থাকার স্বাদ ছিলো। সম্ভাব্য সব মানুষের কাছে বেঁচে থাকার আর্জি জানিয়েছি। আমি বার বার বাঁচতে চেয়েছিলাম।

ই-কমার্সে বিনিয়োগ করা টাকা নিয়ে লিখেন, আমার এই লেখাটা যে বা যারা পড়ছেন, সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ।

দয়া করে আমার হয়ে কয়েকটি কাজ করে দিবেন। ই-কমার্স খাতের ‘থলে.কম’ (Tholay. com) নামে একটা কোম্পানির কাছে আমার মোট ৪৭ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০০৳ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। (আমার ডয়ারে চেক আর ডকুমেন্টস রাখা আছে) আমার নিজের টাকা। দয়া করে দেখবেন, সেই টাকা টা তুলে আমার ভাইবোনদের দিবেন। ওদের কখনো কিছু দিতে পারিনি। সব সময় নিয়ে গেছি।আমার একটা মটর মেকানিক বন্ধু আছে; জাকির। ও আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা পাবে। ধার নিয়েছিলাম। ৪ মাস আগে। কোন দিন ফেরত চায় নাই। দয়া করে অর টাকা গুলো পরিশোধ করে দেবেন।

আমার কাফন, দাফন যেন স্বাভাবিক ও সুস্থ ভাবে হয় সেটা দেখবেন। জানবেন, আমি বেঁচে থাকার চেয়ে মরে শান্তি পেয়েছি। বাবার কবরের পাশের জায়গাটায় আমাকে সমাহিত করবেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ