শেষ ওয়ানডেতে ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিল দুই দল। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করা আফগানিস্তানের সামনে সুযোগ ছিল বাংলাদেশকে প্রথমবার ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করার। অন্যদিকে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল মান বাঁচানো। সেই মিশনে স্বাগতিক বোলাররা লেটার মার্ক তুলেছে। আর বাকি কাজটুকু সহজেই সেরেছেন ব্যাটাররা। ফলে সান্ত্বনার জয়ে সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ।
আজ (১১ জুলাই) টস জিতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৫ ওভার ২ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে ২১ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার ছিলেন শরিফুল। জবাবে ২৩ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান করেছেন লিটন দাস। এই ম্যাচ হারলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। তামিমের বিশ্রামে একাদশে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখ আবারও ব্যর্থ। এবার ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারলেন না এই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ফারুকির লেন্থ বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি টিকেছে কেবল ১৪ বল, স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পেরেছে ২ রান।
নাঈম দ্রুত ফিরলেও লিটন-শান্ত জুটি আক্রমণাত্মকই শুরু করেছিল। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে ফারুকিকে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন। একবল পর এই পেসারকে আরও একবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন শান্ত। কিন্তু পরের বলেই তার স্টাম্প উপড়ে গেছে। সোজা বলে লাইন মিস করে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ১১ রান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন সাকিব-লিটন। মনে হচ্ছিল, তারাই ম্যাচ শেষ করে আসবেন। সেটি আর হলো না। মোহাম্মদ নবির বলে ক্যাচ তুলে ফিরলেন সাকিব। শর্ট লেংথে দেখে টেনে তুলে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে যেদিকে চেয়েছিলেন, সেদিকে সেভাবে খেলতে পারেননি। ৩৯ বলে ৩৯ রান করে থেমেছেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথেই বিশ্বের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান আর ৬০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন।
গত দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও শেষ ম্যাচে দলের মতোই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক লিটনও। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান করেছেন অধিনায়ক। তাতে ২৩ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ জয়ে ৯ বছর দেশের মাটিতে ধবলধোলাই না হওয়ার রেকর্ডটা টিকে থাকল বাংলাদেশের।
এর আগে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি আফগানিস্তান। প্রথম বলেই উইকেট, তারপর তিনটি ডট। পঞ্চম বলে আবারো উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় আর শরিফুলের দ্বিতীয় ওভারের গল্প এটি। আগের ম্যাচে আফগান ওপেনিং জুটি থেকে এসেছিল ২৫৬ রান। তবে আজ তাদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে মাত্র ৩ রানেই। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান আজ ফিরলেন ৬ বলে ১ রান করে। তার বিদায়ের তিন বল পর শরিফুলের বাড়তি বাউন্সে খোঁচা দিয়ে ডাক খেয়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত শাহও।
এরপর আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজও দ্রুত ফেরেন। তাসকিনের বাউন্সারে পুল করার চেষ্টা করেছিলেন এই ওপেনার, কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। দারুণ ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। ৬ রান করে এই ওপেনার ফিরলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় সফরকারীরা। কাকতালীয় ব্যাপার, এই তিনজনই মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন।
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল আফগানিস্তান তখন উইকেটে আসেন মোহাম্মদ নবি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ওপর গুরু দায়িত্ব ছিল দলকে এমন পরিস্থিতি থেকে টেনে তোলার। কিন্তু সেটা তো পারলেনই না, উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ১ রান করে। ফলে ১৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।