গ্রিসে ডুবে যাওয়া নৌকায় ছিল ১০০ শিশু, মৃত্যু ছাড়াতে পারে ৫০০

ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিবাসী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়। দেশটির ভূমধ্যসাগরীয় পেলোপনিস উপকূলের কাছে অভিবাসীদের বহনকারী নৌকাডুবির এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সাগরে ডুবে যাওয়া মাছ ধরার নৌকার বেঁচে যাওয়া অভিবাসীরা বলছেন, নৌকাটিতে ১০০ জন শিশু ছিল বলে ধারণা করছেন তারা।

বুধবার গভীর রাতের নৌকাডুবির এই ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক অভিবাসীকে। তবে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও কয়েকশ। যে কারণে ভয়াবহ এই নৌকাডুবিতে প্রাণহানির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পেলোপনিস উপকূলে ডুবে যাওয়া নৌকায় ৭৫০ জনের বেশি অভিবাসী ছিলেন। এর আগে অভিবাসীদের নৌকা ভাসতে দেখার পর সহায়তা না করায় সমালোচনার মুখে পড়ে গ্রিসের কোস্টগার্ড। তবে দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন অভিবাসীরা।

উদ্ধারকারীরা গ্রিসের বিশাল উপকূলীয় এলাকাজুড়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। তবে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ডুবে যাওয়া নৌকার অভিবাসীদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা নৌকার বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর ব্যাপারে অবাক করা তথ্য দিয়েছেন। তাদের অনেকেই গ্রিসের কালামাতা বন্দরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই পুরুষ।

কালামাতা হাসপাতালের চিকিৎসক মানোলিস ম্যাকারিস স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, হাসপাতালে আসা এক ব্যক্তিকে তার (চিকিৎসক) ফোন দিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগে সহায়তা করেছেন। ওই সময় তিনি নৌকায় প্রায় ১০০ জন শিশু ছিল বলে ফোনে স্বজনদের বলেছেন।

গ্রিসের টেলিভিশন চ্যানেল এএনটি-১ এর একজন প্রতিবেদক বেঁচে যাওয়া এক অভিবাসীর কাছে নৌকাটিতে ১০০ জন শিশু ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ।’

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও জীবিতদের কাছ থেকে প্রায় একই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। তবে নৌকায় শিশু অভিবাসীদের সংখ্যার ব্যাপারে তাদের দাবি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

গ্রিসের সরকারের মুখপাত্র ইলিয়াস সিয়াকান্তারিস বলেছেন, অসমর্থিত সূত্রে নৌকাটিতে মোট ৭৫০ জন অভিবাসী ছিলেন বলে জানা গেছে। দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটিকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি না আসলে কী ঘটছে… তবে কিছু পাচারকারী লোকজনকে আটকে রাখছে।

মঙ্গলবার সকালের দিকে নৌকায় থাকা লোকজনের সাথে যোগাযোগ করার পর গ্রিস কর্তৃপক্ষকে প্রথমে সতর্ক করেছিলেন অ্যালার্ম নাওয়াল সৌফিই। নৌকাটিতে প্রায় ৭৫০ জন অভিবাসী ছিলেন বলে ধারণা করছেন তিনি।

গ্রিসের কোস্টগার্ড বলছে, বুধবার স্থানীয় সময় রাত ২টা ৪ মিনিটের পর নৌকাটি পেলোপনিস থেকে প্রায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই সেটি একেবারে উল্টে যায়। দেশটির নৌবাহিনীর জাহাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিমান, উড়োজাহাজ এবং ওই এলাকায় থাকা ছয়টি নৌকা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। প্রবল বাতাসের কারণে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা জটিল হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরের সীমান্তবর্তী দেশ ইতালি, স্পেন, গ্রিস, মাল্টা এবং সাইপ্রাসে প্রায় ৭২ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী পৌঁছেছেন। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায় যুদ্ধ, নিপীড়ন এবং দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের ইউরোপে পাড়ি জমানোর অন্যতম প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে গ্রিস।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ