সকালে জমিতে সেচ দিলে বিকেলেই পানি শুকিয়ে যাচ্ছে

‘কি বুলবো ডেইলি (প্রতিদিন) পানি ছ্যাকা (সেচ) ল্যাগছে (লাগছে) ধানের বিলে (জমিতে)। তার পরেও বিলে (জমিতে) পানি থ্যাকছে না। আগে দুইদিন থ্যাকি তিনদিন পর পর বিলে (জিমতে) পানি দিতু (দিতাম)। কিন্তু কিছু দিন থ্যাকি প্রতিদিনই বিলে পানি দিতে হ্যাচে (হচ্ছে)। ইবের (এ বছর) বিলে (জমিতে) বেশি পানি দিতে ল্যাগি (লেগে) ধান তয়ার (তৈরির) খরচ ব্যাড়ি (বেড়ে) গেল। যে খরা ধানে পানি দি (দিয়ে) কুলা উঠতে পারছিনি (পারছি না)।

গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া এলাকায় নিজের বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে আসা সিরাজুল ইসলাম এভাবে বলছিলেন তাপদাহে শুকিয়ে যাওয়া ধানের জমির কথা। তিনি একই এলাকার একটি খাল থেকে বোরো ধানের জমিতে পানি সেচ দিচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, এখানে আমাদের চার বিঘা জমিতে বোরো ধান রয়েছে। জমিতে পানি সেচ দিতে মাথা খারাপ হয়ে গেল। এদিকে ডিজেল তেলের দাম বেশি। আবার ভাড়ায় মেশিন নিলে ২০০ টাকা ঘণ্টা। সবমিলে ধান চাষ করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় জমিতে কম হলে ধান চিটা হয়ে যাবে। তাই কষ্ট করে হলেও জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে।

জমিতে সেচ দিতে আসা আক্কাস আলী বলেন, সকাল ৯টায় মেশিন চালু করেছি। এখন বিকেল সাড়ে ৪টা তবুও চলছে মেশিন। জমিতে পানি দিয়ে জমানো যাচ্ছে না। জমিতে পানি দেওয়ার একবেলা পরেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন যত কষ্টই হোক সেচ দিতেই হবে। ধানে সেচ না দিলে চিটা হয়ে যাবে।

অন্যদিকে, কিছুটা দূরে একই খালে একটি লক্কর ঝক্কর সেচ মেশিন নিয়ে লুটপুট করছেন তিন ব্যক্তি। কাছে গিয়ে দেখা গেল মোয়াজ্জেম হোসেন, তার ছেলে মামুন হোসেন ও শ্রমিক মনিরুল ইসলামকে। তারা তিনজনে মিলে বোরো ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার মেশিন প্রস্তুত করছেন। তাদের ধানের জমিতেও পানি টান পড়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। ৯০ শতাংশ ধানের শীষ বের হয়েছে। এখন জমিতে পর্যাপ্ত পানি জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। পানি না জমিয়ে রাখলে বাকি ধানের শীষগুলো বের হবে না। এছাড়া যেগুলো শীষ বের হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই চিটা হয়ে যাবে। ফলে ধানের ফলন কম হবে। এমন অবস্থায় জমিতে পানি জমিয়ে রাখা ছাড়া বিকল্প নেই। আগে ৩ দিন পর পরে জমিতে পানি দিতাম। এখন একদিন পর দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর থেকে এ বছর বোরো ধান চাষের খরচ বেশি হয়ে গেলো। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু শেষের দিকে এসে খরার কারণে অতিরিক্ত সেচ দিতে হচ্ছে জমিতে। এটি আমাদের জন্য বাড়তি খরচ। যেখানে এক বিঘা ধানের শীষ বাবদ খরচ হতো ৭ হাজার টাকা। সেখানে ৯ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। এখনো জমিতে কমপক্ষে ৮ দিন সেচ দিতে হবে। এর মধ্যে আল্লাহ বৃষ্টি দিলে সেচের খরচটা বেঁচে যাবে।

অন্যদিকে, তীব্র খরার কারণে জমিতে পানি না থাকায় বিভিন্ন রোগবালাই বেড়েছে বলে দাবি করছেন ধান চাষি আরিফ হোসেন। তাই তিনি জমিতে বালাই নাশক স্প্রে করছেন।

ধানচাষি আরিফ হোসেন জানান, খরার কারণে জমিতে পানি জমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সকালে সেচ দিলে বিকেলে এসে পানি দেখা যায় না। জমিতে পানি না থাকার কারণে রোগবালাই ছাড়াও ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। এছাড়া কিছু কিছু ধানে চিটা লক্ষ্য করা গেছে। তাই আগাম সর্তকতা হিসেবে বালাইনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এপ্রিল মাসে খরা হয় এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিগত বছরগুলো থেকে হয়ে আসছে। তবে যাদের ধান পেঁকেছে, আমরা তাদের কেটে নিতে বলেছি। কারণ এখন ধানের দাম ও ধানের খড়ের দাম ভালো আছে। যদি বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হয় তাহলে কৃষকের ক্ষতি হয়ে যাবে। এছাড়া যাদের জমিতে ধানের শীষ বের হয়েছে বা কয়েক দিনের মধ্যে বের হবে তাদের জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে সেচ দিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ