রাজশাহীর পুঠিয়ায় হত্যাকে আত্মহত্যা বানানোর অভিযোগ!

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গলপাড়া গ্রামে একটি পরিকল্পিত মার্ডারকে আত্মহত্যা বলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, এমনটায় অভিযোগ ভুক্তভোগী এক পরিবারের। গত ১৪ নভেম্বর রাত্রিতে মারা যায় পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গলপাড়া গ্রামের আবুর ছেলে নিজামের স্ত্রী মোসাঃ বন্যা খাতুন (২২)। তবে মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হয় পরের দিন সকালে। এরপর নিজামের পরিবার থেকে বলা হয় বন্যা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু বন্যার মৃত্যুকালীন পজিশন/দেহ বিবরণ বলে দিচ্ছে এটি আত্মহত্যা নাও হতে পারে।

পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পানিকুমড়া গ্রামের এসাহকের মেয়ে বন্যা বেগম (২২) গত ৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল পুঠিয়া উপজেলার ডাঙ্গলপাড়া গ্রামের আবুর ছেলে নিজামের সাথে।বিয়ের ৫বছর অতিবাহিত হলেও তার ঘরে কোনো সন্তান না হওয়ায় বহুবার ডাক্তার দেখানো হয়। সন্তান না হওয়ার কারণে বন্যাকে বিয়ের এক বছর পর থেকে স্বামী ও শাশুড়ি নির্যাতন করত বলে অভিযোগ করে বন্যার পরিবার। কিন্তু সেই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে মাঝে মাঝে টাকার জন্য চাপ দিত নিজামের পরিবার। মেয়ের সুখের জন্য দুই বছর আগে জমি বিক্রয় করে ৮০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে নিজামকে। তারপরও আবার টাকার জন্য চাপ দিত বলে জানান বন্যার ছোট ভাই রানা হামিদ।

গত সোমবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে বন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মরদেহ ঝুলিয়ে দেয়া হয় জানালার গ্রিলের সাথে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। বন্যার স্বামীর বাড়ি থেকে প্রচারও চালানো হয় বন্যা গলায় গামছা পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। থানা পুলিশও কোনো কিছু তদন্ত না করেই প্রাথমিক সরতহালের পর নিয়মিত মামলায় আত্মহত্যার বিষয়টিই উল্লেখ করেছে। কিন্তু বন্যার পরিবার কোনভাবেই মানতে রাজি নয়, এটি আত্মহত্যা!! তাই বন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে চাইলে পুঠিয়া থানা পুলিশ কিছুটা গড়িমশি করে। কারন নিজামের আপন ছোটভাই ও তার স্ত্রী পুলিশ সদস্য। বন্যার মৃত্যু নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন? যদিও বন্যার মরদেহ পোষ্টমর্টেম করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে এটি হত্যা না আত্মহত্যা জানা যাবে বলে জানাচ্ছেন পুলিশ। একই সাথে বন্যাকে হত্যা করা হতে পারে, এমন সন্দেহে তার স্বামী নিজামকে আটক করেছে পুঠিয়া থানা পুলিশ। আটকের পর তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

বন্যার ভাই রানা হামিদ জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ভগ্নিপতি নিজামের পরিবার থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় বন্যা গলায় গামছা বেঁধে আত্মহত্যা করেছে। খবর শোনার পর তারা বোনের বাড়িতে যান। তিনি জানান, একজন মানুষ আত্মহত্যা করলে তার ঝুলে থাকার কথা। কিন্তু তার বোন বন্যা গলায় ফাঁস দিলেও দুই পা হাটু পর্যন্ত বিছানায় পড়ে ছিল। বিষয়টি পুরোটাই রহস্যজনক। তিনি বলেন, একই ঘরে বোন ও বোন জামাই নিজাম ছিল। কিন্তু সেই ঘরে বন্যা গলায় ফাঁস দিল আর তিনি জানতে পারলেন না এটা কি করে সম্ভব। রানা জানান, বিয়ের এক বছর বন্যার সংসার ভাল চলেছে। এরপর নিজাম একের পর এক বন্যাকে নির্যাতন করেছে। পরে একের পর এক যৌতুকের চাপ দেন নিজাম। বোনের সুখের জন্য গত ৫বছরে তাকে বেশ কয়েকবার কয়েক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগেও বন্যাকে মারধর করে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেয় নিজাম। তিনি অভিযোগ করেন, বন্যাকে হত্যার পর গলায় গামছা পেচিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। আর এর সাথে পুঠিয়া থানা পুলিশের যোগ সাজস রয়েছে।

বন্যার মামা মহিদুল ইসলাম জানান, বন্যাকে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কারণ পুলিশ বন্যার মরদেহ উদ্ধারের পর তার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, লাশ উদ্ধারের পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমশি করে। পরে নেতার ফোনের চাপে তারা মামলা নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু আমরা যাদের সন্দেহ করে মামলা করতে চাই, পুলিশ তাদের মন একজনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি সাজিয়ে বন্যার স্বামিকে গ্রেফতার করেছে। তিনি অভিযোগ করেন আসামী পক্ষের সাথে যোগসাজস করে এই হত্যার ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে পুঠিয়া থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল বারি জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি। তবে আমি থানায় নেই, নির্বাচনের ডিউটিতে রয়েছি। সার্কেল এসপি স্যার অবগত আছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুঠিয়া থানার এসআই রাসেদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে আমরা যা পেয়েছি তাতে এটি অপমৃত্যু বলে মনে হয়নি। যার কারণে লাশের পোষ্টমর্টেম করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা।

বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম জানান, বন্যার মরদেহ পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। তিনি বলেন, বন্যার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ