মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকেই। বিষয়টাকে স্রেফ ‘মন খারাপ’ বলে উড়িয়ে দিতে চান কেউ কেউ। অবস্থা খুব জটিল আকার ধারণ করলে তাকে ‘পাগল’ বলেও আখ্যা দেন আশেপাশের লোকজন। কেবলমাত্র ভুক্তভোগীই অনুধাবন করেন তার দুঃসহ অনুভূতি। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বেছে নেন আত্মহননের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
তবে অনেকেই ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। নিয়েছেন চিকিৎসা। সোমবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে আরও একবার সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন তারকারা। আনুশকা শর্মা থেকে শুরু করে আলিয়া ভাট, মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে কীভাবে আবার মূলস্রোতে ফিরেছেন? রইল সেই অনুপ্রেরণার গল্প।
মানসিকভাবে দুর্বল হলে চাপও বেড়ে যায়। চাপ কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসার। লজ্জা কিংবা সংকোচ নয়, অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার মতো এর জন্যও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে হয়। যা নিয়ে সব সময়েই মানুষকে সচেতন করে আসছেন বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। তিনি নিজেও ভুক্তভোগী।
এক সাক্ষাৎকারে আনুশকা বলেন, ‘পেটব্যথা করলে ডাক্তারের কাছে ছুটছেন আর এটা লুকিয়ে রাখছেন? আমার নিজেরই উদ্বেগের সমস্যা রয়েছে। তার চিকিৎসাও করাই। ওষুধ খাই মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে। কেন বলছি? কারণ এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। শারীরিক সমস্যা। যে কারো হতে পারে। আমার পরিবারে অনেকেই অবসাদজনিত সমস্যায় ভোগেন। আরও মানুষ এ নিয়ে কথা বলুন যাতে বাকিরাও খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারেন তাদের সমস্যা নিয়ে। এতে লজ্জার কী আছে? আমি নিজের লক্ষ্য বানিয়েছি একে। কেউ যেন আমার চারপাশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে দ্বিধা না করেন, সেটাই দেখতে চাই।’
উদ্বেগের সমস্যা তারও ছিল। বহুদিন ধরে মানসিক অবসাদের সঙ্গে লড়াই করেছেন শ্রদ্ধা কাপুর। এদিকে জানতেনই না, তার সমস্যাটা আসলে কোথায়। অভিনেত্রী বলেন, ‘শুরুতে কিছুই বুঝতে পারিনি। উদ্বেগ বাড়ছিল। মনে হয় ‘আশিকি’-র পর পরই শারীরিক সমস্যা শুরু হলো। এমন একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল যার জন্য শরীরে কোনো কিছু দায়ী নয়। সব পরীক্ষা করিয়েও কোনো গণ্ডগোল পাওয়া যায়নি। ভাবছিলাম এটা কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে?’
তারপর অভিনেত্রী বোঝেন মানসিকভাবে নিজেকে অবহেলা করেছেন দীর্ঘদিন। এ তারই ফল। শ্রদ্ধার কথায়, ‘নিজের একটা অংশ হিসাবে মনকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার যত্ন নিতে হবে। ভালোবাসতে হবে নিজেকে। মানসিক অবসাদ হোক বা উদ্বেগ, আগে নিজেকে বুঝতে হবে আপনি কে? ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন?’
মানসিক অবসাদে ভুগে দীর্ঘকাল বিষণ্ণ ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। রণবীর সিংকে স্বামী হিসাবে পেয়েও তিনি সুখী হতে পারছিলেন না। সে সময় অভিনেত্রীর মা উজ্জ্বলা পাড়ুকোন মনোবিদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মেয়েকে। ‘লিভ লাভ লাফ’ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দীপিকা জানান, দেশের মানসিক স্বাস্থ্য, বিষণ্ণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। তার সংগঠনও সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। নিজের হতাশা কাটাতে যেমন চিকিৎসা করিয়েছিলেন অভিনেত্রী, বাকিদেরও সে নিয়ে সচেতন করতে চান। বলেন, ‘আমি কোনো কারণ ছাড়াই ভেঙে পড়তাম। এমন দিন ছিল, যখন আমি ঘুম থেকে উঠতে চাইতাম না। শুধু ঘুমিয়ে থাকতাম কারণ, ঘুম বাস্তব ছেড়ে পালানোর সেরা উপায়। আমি আত্মহত্যার কথাও ভাবতাম মাঝেমাঝে।’
কিন্তু বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা এড়াতে যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করতেন। এখনও করেন। দীপিকার কথায়, ‘আমার বাবা-মা বেঙ্গালুরুতে থাকেন। তারা যখনই আমাকে দেখতে আসেন, আমি সেই সাহসী মেয়েটা হয়ে যাই। সব সময় বাবা-মাকে দেখাতে চাই যে, ভাল আছি।’
সদাহাস্যময়ী ২৯ বছরের নায়িকার মধ্যেও দেখা দিয়েছিল সংশয়। সমস্যাটা ঠিক কোথায়? বুঝতে সময় লেগেছিল। বছর তিনেক আগে মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়েছিলেন আলিয়া ভাট। অভিনেত্রী বলেন, ‘সব সময় নিজেকে বুঝিয়ে যেতাম এই কষ্টটা কাজের চাপে হচ্ছে। এখন আমি খুব ক্লান্ত তাই হচ্ছে। আমি যন্ত্রণা পুষে রাখলাম। উদ্বেগ নিয়েই কাজ করে গিয়েছি দিনের পর দিন। তারপর একদিন বুঝলাম।’
আলিয়ার পরামর্শ, ‘নিজেদেরই স্বীকার করতে হবে যে আমরা ভালো নেই। তখন থেকেই খোঁজা শুরু হবে, কীভাবে ভালো থাকব।’
করোনা মহামারির সময়ে সব থেকে কঠিন ছিল মন ঠিক রাখা। চিকিৎসার জন্য ডাক্তার মিললেও দিনরাত মানসিক উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, আতঙ্কের মোকাবিলা করা সমাজের সবস্তরের মানুষকে যেন ঝড়ের রাতে একই নৌকায় তুলে দিয়েছিল। সে সময় নেটদুনিয়ায় সংযোগ বজায় রেখেছিলেন অনেকেই। তারকা থেকে সাধারণ— একযোগে মানসিক অবসাদ মোকাবিলার চেষ্টা দেখা গিয়েছিল বিশ্বজুড়ে। প্রতিবার যখন কোনো তারকা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেন, সেই বার্তা সমাজকে প্রভাবিত করে। ছড়িয়ে যায় বিভিন্ন স্তরে। সেই নিরন্তর ছড়িয়ে পড়াকে উৎসাহ জোগাতে ১০ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হিসাবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।