পাকিস্তানে বন্যা : গুরুতর ঝুঁকিতে আছেন ৫ লক্ষাধিক অন্তঃসত্ত্বা

ইতিহাসের ভয়াবহতম বন্যায় পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন ৫ লাখেরও বেশি অন্তঃসত্ত্বা। এই নারীদের মধ্যে ৭৩ হাজারেরও অধিক আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই সন্তান প্রসব করতে যাচ্ছেন।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ) বুধবার পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতিতে জনবিপর্যয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় নারীর প্রতি সহিংতা বৃদ্ধি পাওয়ারও ঝুঁকি আছে।

উপমহাদেশের তিন দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয় জুন মাস থেকে। চলতি বছরের বর্ষাকালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা ও বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হলেও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বেলুচিস্তান ও খাইবার-পাখতুনওয়া প্রদেশের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছিল।

তার মধ্যেই গত সপ্তাহের শেষ দিকে শুরু হওয়া টানা প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পাকিস্তানের তিন প্রদেশ সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ার বিপুল এলাকায় নজিরবিহীন বন্যা দেখা শুরু হয়েছে।সরকারের দুর্যোাগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের ৩ ভাগের এক ভাগ এলাকা বন্যার পানির নিচে আছে।

জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পাকিস্তানে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন অন্তত ৬৪ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে নারী ও মেয়েদের সংখ্যা কমপক্ষে ১৬ লাখ। এদের সবারই জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

ইউএনএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বন্যা উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি; এবং ৭৩ হাজরেরও বেশি নারী আগামী সেপ্টেম্বরেই সন্তান প্রসব করতে যাচ্ছেন। এই নারী ও নবজাতকদের জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন, কিন্তু মাতৃত্বকালীন সেবার জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ থাকা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এই অন্তঃসত্ত্বারা।’

‘এছাড়া বন্যায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই এখন চরম অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছেন, ফলে উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার উল্লম্ফন ঘটারও জোর আশঙ্কা রয়েছে।’

পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী—বন্যা ও ভূমিধসের ফলে সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও খাইবারপাখতুনওয়া প্রদেশে প্রায় ১২শ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিক আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাতৃত্বকালীন চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো।

ইউএনএফপির পাকিস্তান শাখার প্রধান নির্বাহী ডা. বাখতিয়র কাদিরভ এএফপিকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘ পাকিস্তান সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যা উপদ্রুত এলাকার অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জরুরি মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে।

তিনি আরও জানান, পাকিস্তানের নারী ও মেয়েদের জন্য ‘ডিগনিটি কিট’ তৈরি ও বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে ইউএনএফপি। স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন উপকরণ ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে এই কিট।

বাখিতয়র কাদিরভ বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সরঞ্জাম ও মানবসম্পদ সরবরাহ করে যাব, যেন চ্যালেঞ্জিং মানবিক পরিস্থিতির মধ্যেও পুরোপুরি কাজ চালানো যায়।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ