দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্ন দিয়েই হয়েছিল রীতিমতো। স্কোরবোর্ডে ২৪ রান তুলতেই নেই হয়ে গিয়েছিল ৫ উইকেট। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে ছিল খাদের কিনারে, চোখরাঙানি দিচ্ছিল লজ্জার সব রেকর্ড। তবে শেষমেশ সে লজ্জার মুখে বাংলাদেশকে পড়তে হয়নি মুশফিকুর রহিম আর লিটন দাসের কল্যাণে। দু’জন মিলে ভেঙেছেন ৬৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড, অপরাজিত আছেন এখনো। তাতেই লজ্জার চোখরাঙানি এড়িয়ে বাংলাদেশ ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনটা শেষ করল দারুণভাবে।
আগের ম্যাচে কাসুন রাজিথা কনকাশন বদলি হয়ে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাট হাতে এগিয়ে চলছিল বেশ। রাজিথা এসেই বিপদে ফেলেছিলেন স্বাগতিকদের। সেই রাজিথাকে এই ম্যাচে মূল একাদশে নিয়েই দ্বিতীয় টেস্ট শুরু করে শ্রীলঙ্কা। দারুণ এক স্পেলে শুরুতেই বাংলাদেশকে টলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সকালে ক্রিজের ব্যবহার করে স্টাম্প লক্ষ্য করে দারুণ সফলতাই পেয়েছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের দোষও ছিল বৈকি! দুয়ের মিশেলে রাজিথা শুরুর চার ওভারে তুলে নিলেন তিন উইকেট।
ক্রিজের ব্যবহার না করলেও আসিথা ফার্নান্দোর লক্ষ্যেও ছিল স্টাম্পই, দ্রুত দুটো উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনিও। তাতেই বাংলাদেশ খুইয়ে বসল ৫ উইকেট, মিরপুরে তখন দর্শকরা ঠিকঠাক ধাতস্থ হয়ে বসতেও পারেননি। পারবেন কী করে, ম্যাচের যে তখন ঠিকঠাক ৮ ওভারও শেষ হয়নি! ২৪ রান তুলতে ৫ উইকেট নেই, এমন পরিস্থিতিতে দুই অঙ্কের রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও ভালোভাবেই তাড়া করে ফিরছিল বাংলাদেশকে। তবে শেষমেশ সে লজ্জায় বাংলাদেশকে পড়তে দেননি লিটন আর মুশফিক।
লঙ্কান দুই স্পিনার প্রবীন জয়াবিক্রমা আর রমেশ মেন্ডিস তেমন হুমকিতে ফেলতে পারছিলেন না। তারই সুযোগ নিয়েছেন লিটন আর মুশফিক। লিটন ব্যাকফুটে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, তার ইনিংসের ৫০ ভাগেরও বেশি রান এসেছে মিড উইকেট আর স্কয়ার লেগ দিয়ে। ওদিকে মুশফিকও ছিলেন সপ্রতিভ, মাঠের চারপাশে খেলেছেন। তাতেই শুরুর শঙ্কাটা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় ৬৬ রান নিয়ে।
পরের সেশনে উঠল ৮৭ রান। এই সেশনে ৬৩ বছরের পুরোনো একটা বিশ্বরেকর্ডও ভেঙে ফেলেন লিটন আর মুশফিক। ২৫ রানের কমে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটা এতদিন ছিল পাকিস্তানের দখলে। ১৯৫৯ সালে ঢাকার বুকেই পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেই ম্যাচে ২২ রানে ৫ উইকেট খোয়ানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে ওয়ালিস ম্যাথিয়াস আর সুজাউদ্দিন তুলে ফেলেন ৮৬ রান। যা পরের ৬৩ বছর ছিল অক্ষত। সেই রেকর্ডটাকেই লিটন আর মুশফিক পাঠিয়ে দেন সাজঘরে।
এরপর এই সেশনে দুই জনই ছুঁয়ে ফেলেন ৫০। অর্ধশত রানের মাইলফলক ছোঁয়ার আগে অবশ্য লিটন ফাঁদে পা দিয়ে বসেছিলেন শ্রীলঙ্কার। স্পিনে কাজ হচ্ছিল না দেখে পেসার ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, স্কয়ার লেগ আর ডিপ ফাইন লেগে ফিল্ডার রেখে প্রলুব্ধ করা হচ্ছিল হুক-পুলের, সে লোভটাই ব্যক্তিগত ৪৭ রানে সামলাতে পারেননি লিটন। শ্রীলঙ্কার বদলি ফিল্ডার কামিন্দু মেন্ডিস অবশ্য তা হাতে জমাতে পারেননি, সে যাত্রায় বেঁচে যান লিটন।