হঠাৎ দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। রাজধানীতে খোলা সয়াবিন তেল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৯২-১৯৫ টাকা কেজি দরে, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে।
বেশি দামেও তেল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। শুধু খোলা তেলই নয়, বোতলজাত তেলেও চলছে হাহাকার। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না তেল। এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। বেশি দামে তেল বিক্রির জন্য কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোববার সকালে খোলা তেল বিক্রি করেছেন ১৭৫ টাকা কেজিতে। বিকেলে দেখেন, কিনতেই হচ্ছে ১৮২ টাকায়। সোমবার সকালে কিনেছেন ১৯২ টাকা কেজিতে।
তাদের অভিযোগ, গত এক দেড় মাস ধরে ৩-৫ কেজি ওজনের তেলের বোতল দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এক-দুই কেজির বোতলের চাহিদা যেখানে আমাদের এক বাক্স, সেখানে পাওয়া যায় দুই-তিন পিস করে।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি। আমদানি হচ্ছে খুবই কম। রমজান মাসে তেলের সংকট যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। হঠাৎ করে ইন্দোনেশিয়া পামওয়েল তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তেল ব্যবসায়ী ওয়ালিদ হোসেন বলেন, পামওয়েল উৎপাদনের দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে খোলা তেলের দাম বেড়েছে। তাই আজ থেকে খোলা তেল পাইকারিতে ১৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি, এখানে আমাদের তো লাভ লসের কিছু নেই।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। আর পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা কেজিতে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও একই তেল খুচরা বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা কেজিতে।
সরিষার তেল বিক্রি করা হচ্ছে ২৭০-৩০০ টাকা কেজি। অথচ এক সপ্তাহ আগে সরিষার তেল বিক্রি করা হয় ২৫০ টাকা কেজিতে। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকায়। তিন ও পাঁচ লিটার বোতলজাত তেল নেই বেশির ভাগ দোকানে।
পাঁচতলা বাজারে ব্যবসায়ী মোকাফ্ফার হোসেন বলেন, রোববার বিকেলে ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা ড্রাম (১৮৫কেজি ওজনের) কিনেছি তেল আজ সকালে কিনেছে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকায়। অনান্য খরচ বাদে এখন বিক্রি করছি ১৯৫ টাকা কেজিতে। আমরা পাইকারি দরে বিক্রি করছি। জানি না বিকেলে আরও কত টাকা বাড়বে।
মধ্যবাড্ডার ছয় দোকান ঘুরে ২ কেজি ওজনের একটি বোতলজাৎ সয়াবিন তেল পেয়ে বেজায় খুশি গৃহিণী আছিয়া খাতুন। তিনি বলেন, গতকাল ৯০০ টাকা দিয়ে ৫ কেজি ওজনের সয়াবিন তেলের একটি বোতল নিয়েছি। আজকে শুনেছি দাম বাড়ছে। আজকে আব্বা-আম্মার জন্য তেল কিনতে এসেছি। কিন্তু পাঁচ দোকান খুঁজে তেল পাইনি। এই দোকানে পেয়েছি একটি তাও আবার দুই কেজির।
রামপুরার আনিস মেসার্সের ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম বলেন, খোলা তেল ২০০ টাকা কেজি। বোতল ১৬৮ টাকা লিটার। বেশি দিতে পারব না। তার মতই একই কথা বলেন, আলমগীর, সোহাগ এবং পিন্টু মন্ডল। তারা সবাই রামপুরা বনশ্রী এলাকার দোকানদার। তারা বলেন, গত দুই মাস দরে কোম্পানি থেকে তেল দিচ্ছে না।
সরকারি তথ্য মতে, দেশে সয়াবিন ও পাম অয়েলের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি মজুত রয়েছে। এখন পর্যন্ত যে তেল রয়েছে নতুন করে তেল আমদানি না হলেও এই তেল দিয়ে অন্তত পক্ষে আরও তিন মাস চলবে। আর নতুন করে বাড়তি দামে যে তেল আসবে, তা আসতে দুই মাস সময় লাগবে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন,পামওয়েল তেল আমরা সাধারণত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করি। এখন ইন্দোনেশিয়া পামওয়েল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে।
ইন্দোনেশিয়া পামওয়েল রপ্তানি বন্ধ করেছে শনিবার, তাহলে এখন দাম বাড়ানো হচ্ছে কেন –এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তেলের বাজার তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। একটির দাম বাড়লে এমনিতেই আরেকটির দাম বাড়তে থাকে।