মৌলভীবাজারে অবাধে চলছে ডলার-পাউন্ড কেনাবেচা

প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টের রয়েল ম্যানসন মার্কেটের নিচ তলা ও আশপাশের এলাকায় অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, রয়েল ম্যানসন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা। মার্কেটের নিচ তলার ডান দিকের তৃতীয় নম্বর দোকানটি দেখে মনে হবে এটি মোবাইলের চার্জার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকান। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে দোকানের ক্যাশে বসা এক ব্যক্তির কাছে মানি এক্সচেঞ্জ করা যাবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘যাবে, ডলার নাকি পাউন্ড।’ ১০ পাউন্ডের নোট বলায় তিনি বললেন, ‘পাউন্ড প্রতি ১২০ টাকা দেওয়া যাবে।’ তারপর অনেক বাকবিতণ্ডার পর পাউন্ড প্রতি ১৩০ টাকা দিতে রাজি হলেন। ১০ পাউন্ডের নোট এক্সচেঞ্জ করা হলো ১৩০০ টাকায়।

এভাবে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করছে এই সংঘবদ্ধ চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় একটি মাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটি হলো সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ।

তবে জেলায় অন্তত শতাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ একটি নথি কাছে এসেছে।

তালিকায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে শহরের রয়েল ম্যানশনের তরফদার এন্টারপ্রাইজ, শাহ মোস্তফা টেলিকম, রুমন এন্টারপ্রাইজ, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স, মদিনা ট্রেডার্স, এসএ ট্রাভেলস এন্ড কনসাল্টেড, কোরেমি ট্রেডার্স, জিসান এন্টারপ্রাইজ, এফ ইলেকট্রনিক্স, আহমদ ম্যানশনের নিউ জলি ক্লথ স্টোরের নাম।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো ছাড়াও অবৈধ আরও শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করে আসছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্র বৈদেশিক মুদ্রা কম দামে প্রবাসীদের কাছ থেকে কিনে নেয়। যখন দাম বেড়ে যায় তা আবার বেশি মূল্যে হুন্ডি ব্যবাসায়ীদের কাছ বিক্রি করে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বৃহৎ একটি অংশ কালো টাকা হিসেবে আড়ালে রয়ে যায়। এই চক্রের সঙ্গে ঢাকার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই এলাকার রুমন এন্টারপ্রাইজে গিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ হয় কিনা জানতে চাইলে ক্যাশে বসা ব্যক্তি বলেন, ‘না না আমরা এখানে কোনো এক্সচেঞ্জ করি না। সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জে যান। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানেই এক্সচেঞ্জ হয়।’

তবে রয়েল ম্যানসন মার্কেটের নিচ তলায় কিছু সময় অবস্থানের পর দেখা গেল, গাড়ি থেকে প্রবাসীরা নেমে আসছেন। অবৈধ এসব দোকানিরা তাদের রিসিভ করে মানি এক্সচেঞ্জ করছেন। মোবাইলের দোকান, টাইলসের দোকান, কাপড় ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে চলছে অবৈধ হুন্ডি এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা। ক্রেতাকে হাতছাড়া না করতে একই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাস্তার দুই পাশে গড়ে তুলেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান।

জেলায় প্রতিদিনই লন্ডন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুদ্রা নিয়ে আসেন প্রবাসীরা। এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে এখানে এসে প্রতারণার শিকার হন তারা।

সরকার অনুমোদিত ব্যবসায়ী সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক সৈয়দ ফয়ছল আহমদ বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে সুনামের সঙ্গে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করছি। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের নিচে ও আশাপাশ এলাকায় অবৈধভাবে ১৫-২০ বছর ধরে লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করছে একটি চক্র। ওরা কীভাবে ব্যবসা করছে এটা প্রশাসনের দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের কারণে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব দেই, তার থেকে আরও বেশি রাজস্ব দিতে পারব। সরকার উপকৃত হবে।

সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা মৌলভীবাজারের ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল হক রাসেল বলেন, জেলায় সরকার অনুমোদিত একমাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ, তারাই বৈধভাবে ব্যবসা করছে। আর অবৈধভাবে কেউ ব্যবসা করছে কিনা আমার জানা নেই। অবৈধভাবে কিংবা সরকারের চ্যানেলের বাহিরে কেউ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব হারাবে। এসব অবৈধ চ্যানেল বন্ধ করা প্রয়োজন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ