তেল নিয়ে তেলেসমাতির পর এবার হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আলু ও ডিমের দাম। হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। দাম কেন বাড়ল তারাই জানেন। আড়তদাররা বলছেন, স্থলবন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছেন, পাশাপাশি সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেওয়ায় দাম বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) রাজধানীর আড়তগুলোতে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা কেজিতে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে। অথচ দুই-তিন দিন আগেও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে ভোক্তাদের ভয় দেখাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের কথায় সে কথার সত্যতাও পাওয়া গেছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা রওনক জাহান বলেন, মঙ্গলবার পেঁয়াজ কিনলাম ৩৫ টাকা কেজিতে। আজ কিনতে আসছি দোকানি বলছেন, ৪৫ টাকা কেজি। আজ না নিলে কাল নাকি দাম আরও বাড়বে।
ওই বাজারের ব্যবসায়ী আনিছুজ্জামান বলেন, ভালো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ টাকায়। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩০-৩৫ টাকায়। তিনি বলেন, আজ যদি পেঁয়াজ না কেনেন, তবে আগামীকাল আরও বেশি দামে কিনতে হবে।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষকের কথা চিন্তা করে নতুন করে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে একজন কৃষকের যে খরচ হয়, সেই খরচ মেটাতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভোক্তারা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। কারণ এখন কৃষকদের হাতে আর পেঁয়াজ মজুত নেই। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনেছেন। এখন বেশি দামে বিক্রি করতে পাঁয়তারা করছেন। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে হলে ভরা মৌসুমে কৃষদের কাছ থেকে সরকারকে পেঁয়াজ কেনার পরামর্শ দেন তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী অন্তর বলেন, দুই দিন আগেও পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করেছি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আজ কেনা পড়ছে ১৮০ টাকা পাল্লা। বিক্রি করেছি ২০০ টাকায়।
হঠাৎ কী কারণে দাম বাড়ল— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগেছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এছাড়া বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার শ্যামবাজার। ওই বাজারের বড় ব্যবসায়ী হাজী মাজেদ বলেন, সরকার নতুন করে পেঁয়াজের আইপি দিচ্ছে না, ফলে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থলবন্দরের কাছাকাছি যেসব পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রয়েছে তারা পেঁয়াজ মজুত করে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে আইপি আপাতত বন্ধ রেখেছে। তার মতে, এখনো ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ কৃষকদের হাতে রয়েছে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা তাদের মূল্য পাবেন। কারণ কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ২৭ টাকা খরচ হয়েছে। মৌসুমের সময় ১৭-২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সরকারই পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
এ ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে কোনোভাবে যেন ৩৫ টাকার বেশি না হয়, সেই দিকে আমরা খেয়াল রাখছি। অর্থাৎ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে যাতে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়।
পেঁয়াজের পাশাপাশি আলুর দামও কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। বুধবার (১১ মে) ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু আজ রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। যা দুই দিন আগেও ছিল ১০৫ টাকা ডজন। অর্থাৎ ডিমের দাম হালিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।