ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানে ড্রোন হামলা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজার এক হাসপাতালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফুঁসছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এর মাঝেই বুধবার ভোরের দিকে ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থান লক্ষ্য করে দুটি ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ড্রোন দুটিকে ভূপাতিত করার দাবি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, এক বছরের বেশি সময় পর ইরানে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানে এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তারা রয়টার্সের সাথে কথা বলেছেন। তারা এই হামলার পেছনে সন্দেহভাজন হিসেবে কারা জড়িত, সেবিষয়েও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে ওই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ওয়াশিংটন উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

গত সপ্তাহে ইরানের সাথে সংশ্লিষ্ট ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গাজায় হামাসের সাথে ইসরায়েলের বিরোধে ওয়াশিংটন হস্তক্ষেপ করলে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলে বিমান প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধাস্ত্র পাঠিয়েছে পেন্টাগন। মার্কিন বাহিনী এই যুদ্ধে যোগ দেয়নি। তবে পেন্টাগন বলছে, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যদের মধ্য থেকে ২ হাজার সৈন্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই সৈন্যদের হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধে তেল আবিবকে পরামর্শ এবং আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য ইসরায়েলে মোতায়েন করা হবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, বুধবার ভোরের দিকে ইরানের আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হানার চেষ্টা করেছে একমুখী দুটি ড্রোন। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সৈন্যদের আবাস রয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় ৫০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মাঝে ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানে এই হামলা হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সমর্থন জানাতে বুধবার ইসরায়েলে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এ ধরনের হামলা নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

ইসরায়েল গাজার আল-আহলি আল-আরাবি হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের ব্যর্থ রকেট উৎক্ষেপণকে দায়ী করেছে। তবে এই গোষ্ঠী হাসপাতালে হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি বিমান থেকে হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ করেছেন।

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইরাকে তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। দেশটির শীর্ষ শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিস্তানি গত সপ্তাহে ইসরায়েলের নিন্দা এবং গাজায় ‘ভয়াবহ বর্বরতার’ বিরুদ্ধে বিশ্বকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা হাসপাতালে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছেন।

ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ইরাকের শক্তিশালী সশস্ত্রগোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর। গাজায় ‘নিরীহ মানুষ হত্যায়’ ইসরায়েলকে সমর্থন করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাক থেকে চলে যাওয়া উচিত বলে সতর্ক করে দিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। মঙ্গলবার গভীর রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে কাতাইব হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘এই শয়তানদের অবশ্যই ইরাক ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যথায় তারা পরকালের আগে এই পৃথিবীতে নরকের আগুনের স্বাদ পাবে।’

বর্তমানে ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার সৈন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশি সিরিয়ায় আরও অতিরিক্ত ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। উভয় দেশে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় বাহিনীকে পরামর্শ ও সহায়তা করার মিশনে নিযুক্ত রয়েছে এই সৈন্যরা। ২০১৪ সালে সিরিয়া এবং ইরাকের বিশাল ভূখণ্ড দখল করেছিল আইএস।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ