২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত মানুষের হাতে থাকা সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার টিকা। দেশে দেশে যদি গণটিকাদান কর্মসূচি না চলত, সেক্ষেত্রে বিশ্বে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর হার হতো অনেক বেশি।
তবে মহামারি ঠেকানোর পাশাপাশি এই টিকার আরও একটি উপকারী দিক আবিষ্কৃত হয়েছে। জার্মানির বন ও চীনের শ্যাংজি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, গলবিলের (কণ্ঠনালী ও তার আশপাশের অঞ্চল) ক্যান্সার চিকিৎসায় করোনা টিকা বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
গবেষণা প্রবন্ধে তারা বলেছেন, গলবিলের ক্যান্সারে আক্রান্ত যেসব রোগী করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, টিকা না নেওয়া রোগীদের তুলনায় তাদের দ্রুত ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ক্যানসারের চিকিৎসাও তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হয় অধিক হারে।
শুক্রবার বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাম্প্রতিক এই গবেষণা সম্পর্কে বলা হয়, ‘অধিকাংশ ক্যানসার কোষ মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে সক্ষম। ক্যানসার কোষগুলোতে পিডি-১ নামে এক ধরনের রিসেপ্টর তৈরি হয়, তা দিয়েই (মানবদেহের) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে ক্যানসার কোষগুলো।’
‘গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা টিকা ক্যানসার কোষগুলোর পিডি-১ রিসেপ্টর তৈরির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করতে সক্ষম। বিশেষ করে গলবিলের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা গেছে।’
‘ক্যানসার চিকিৎসার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো (ক্যানসার) কোষগুলোর পিডি-১ রিসেপ্টর তৈরির হার হ্রাস করা। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি করা হয়ে থাকে। যারা করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহার করতে হয় কম এবং তাদের সুস্থতার হারও বেশি থাকে। কারণ করোনা টিকার প্রভাব কোষগুলোর রিসেপ্টর তৈরির ক্ষমতা হ্রাস করে।’
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যালার্টে এই গবেষণা প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চীনের ২৩ টি হাসপাতালে গলবিলের ক্যান্সারে আক্রান্ত ১ হাজার ৫৩৭ জন রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পর এই সিদ্ধান্তে এসেছেন জার্মানি ও চীনের গবেষকরা। তারা লক্ষ্য করেছেন, ওই রোগীদের মধ্যে যারা চীনা করোনা টিকা সিনোভ্যাকের দু’ডোজ নিয়েছিলেন, তারা অন্য রোগীদের তুলনায় অনেক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
গবেষক দলের একজন সদস্য ও শ্যাংজি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়ান লি এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘১ হাজার ৫৩৭ জন রোগীর মধ্যে করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছিলেন ৩৭৩ জন রোগী। তাদের তথ্য যাচাই ও পর্যালোচনা করে আমরা জানতে পেরেছি, একদিকে তারা যেমন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন, অন্যদিকে ক্যানসারের ওষুধের গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও ভুগতে হয়নি তাদের।’