তিস্তা সেচের বাইরে ৪৯ হাজার হেক্টর জমি, বাড়বে কৃষকের ব্যয়

চলতি মৌসুমে এবারও তিস্তা সেচ প্রকল্পে ৪৯ হাজার হেক্টর জমি সেচের বাইরে থাকছে। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না। চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের সেচ দিতে হবে। এতে চারা রোপন ও বপন থেকে ফসল উৎপাদন পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় গুণতে হবে কৃষকদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সেচ কমান্ড এলাকায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলে ৪৯ হাজার হেক্টর সেচ কমান্ডের বাইরে থাকছে।

গতকাল শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) নীলফামারীর ডিমলায় দেশের সর্ব বৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্পের ২০২৩ সালের রবি মৌসুমের সেচ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের টি-ওয়ান-টি ক্যানেলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহবুর রহমান এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করেন। এরপরই সেচ খালে সেচের পানি সরবরাহ শুরু করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চল রংপুরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সার্কেল-২) আবু তাহের, ডালিয়া পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদদৌলা, যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রুবায়েত ইমতিয়াজ, রংপুর বাপাউবো উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায়, বাপাউবো ডালিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (পওর উপ-বিভাগ-১) অমিতাভ চৌধুরী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিন ফিরোজ, টি-ওয়ান-টি ব্যবস্থাপনার সভাপতি ময়নুল হক, সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ রায়, তিস্তা ব্যারাজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ডালিয়া সম্প্রসারণ উপদর্শক হাফিজুর রহমান প্রমুখ।

জানা গেছে, সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেই বছর সেচ দেওয়া সম্ভব হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ দেওয়া হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৭ সালে মাত্র আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর, ২০১৯ ও ২০২০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০২১-২০২২ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। তবে এবার কমে ৩৫ হাজার হেক্টরে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ব্যারাজের বেশ কয়েকটি ক্যানেলের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। তাই বেশ কয়েকটি ক্যানেলে এ বছর পানি দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে আগামী মৌসুম থেকে সেচ কমান্ড এলাকায় সেচের জমির পরিমাণ আরও বাড়বে।

এদিকে, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহ মাত্রা থাকা প্রয়োজন প্রায় ১৪ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছয় হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদের সময় ব্যারাজ পয়েন্টে বিগত কয়েক বছর ধরে পাওয়া যায় মাত্র দুই থেকে তিন হাজার কিউসেক পানি। যে সামান্য পরিমাণ পানি তিস্তা নদীতে পাওয়া যায় তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় মূল নদীতে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদী ধু-ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে তিস্তা সেচ প্রকল্পে এক হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা উন্নয়নন কাজ চলছে। যা ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে রংপুর বাপাউবো উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ অমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, এবার সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারীর ডোমার-ডিমলায়, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, নীলফামারী সদর মিলে ২৫ হাজার হেক্টর জমি, রংপুর গঙ্গাচরা উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমি, দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমি। তবে আমাদের কিছু ক্যানেলের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো পুুনর্বাসন করা হলে আশা করি আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও বেশি জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারবো।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ