ইসরায়েলি একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হ্যাকিং, অপকর্ম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের নির্বাচনে কীভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের এক কনসোর্টিয়ামের দীর্ঘ অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে এসেছে।
৫০ বছর বয়সী ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা তাল হানান এই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ‘জর্জ’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি বেসরকারিভাবে এই প্রতিষ্ঠানটির বিশাল একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম তাল হানান ও তার প্রতিষ্ঠানের মুখোশ উন্মোচন করেছে। হানান ও তার দল ‘টিম জর্জ’ কোড নাম ব্যবহার করে। সাংবাদিকদের তিনটি দল ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের বেশে তাদের কর্মকাণ্ডের মুখোশ উন্মোচন করেছে।
সাংবাদিকদের এই কনসোর্টিয়াম তালাল ও তার দল কীভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে সেই বর্ণনাও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের হাতে সাংবাদিকদের এই অনুসন্ধানের বিস্তারিত তথ্য এসেছে।
হানান টিম জর্জের কার্যকলাপ এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে করা প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দেননি। তবে তিনি বলেছেন, আমি কোনও অন্যায় করিনি।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের দল ‘টিম জর্জ’ কীভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্যকে অস্ত্র বানাচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্ময়কর বিবরণ প্রকাশ করেছে। টিম জর্জের প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে বেসরকারিভাবে গোপনীয় হস্তক্ষেপ করলেও কোনও ধরনের আলামত রাখে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয় সেই বিষয়েও বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। করপোরেট ক্লায়েন্টদের জন্যও ইসরায়েলি এই প্রতিষ্ঠান কাজ করে বলে জানিয়েছে।
আন্ডারকভার সাংবাদিকদের হানান বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠানের পরিষেবাকে অন্যরা ‘ব্ল্যাক অপস’ হিসাবে বর্ণনা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক দল এবং বেসরকারি সংস্থাও তাদের সেবা নিয়েছে; যারা গোপনে জনমতকে পরিচালিত করতে চায়। তিনি বলেন, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপজুড়ে তার প্রতিষ্ঠান সেবা দিয়েছে।
টিম জর্জের অন্যতম প্রধান পরিষেবা হল অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যার প্যাকেজ ‘অ্যাডভান্সড ইমপ্যাক্ট মিডিয়া সলিউশন’ বা এআইএমএস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার, লিঙ্কডইন, ফেসবুক, টেলিগ্রাম, জি-মেইল, ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে হাজার হাজার ভুয়া প্রোফাইলের বিশাল বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাদের। ক্রেডিট কার্ড, বিটকয়েন ওয়ালেট এবং এয়ারবিএনবি-সহ অ্যামাজন অ্যাকাউন্টও রয়েছে এসব ভুয়া প্রোফাইলের।