১৩ দিনে হজের নিবন্ধন করেছেন ৮২৪ জন

২০২৪ সাল বা ১৪৪৫ হিজরিতে পবিত্র হজে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য গত ১৫ নভেম্বর থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই ১৩ দিনে নিবন্ধন করেছে মাত্র ৮২৪ জন। হজযাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সাড়া না মেলায় বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে হজ এজেন্সিগুলো। তবে শেষ সময়ে বেশি সাড়া মিলবে বলে আশা করছে তারা।

হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) নেতারা বলছেন, গত বছর নয় দফা সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা যায়নি। এবারও সেই অবস্থা হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের। এ জন্য হজের খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলার ও রিয়ালের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়াকে দায়ী করছেন তারা। একইসঙ্গে, সৌদি সরকার ওমরাহ প্রক্রিয়া সহজ করায় অনেকে হজের পরিবর্তে ওমরাহর দিকে ঝুঁকছেন। আর করোনার সময় যেসব হাজী আটকে ছিলেন তারাও গত দুই বছরের হজ করে ফেলেছেন। ফলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলছে না।

হজযাত্রীদের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পোর্টাল থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ১৩ দিনে হজের জন্য নিবন্ধন করেছে মাত্র ৮২৪ জন। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ২৯৬ জন আর বেসরকারি পর্যায়ে ৫২৮ জন। গত বছর নিবন্ধন শুরুর প্রথম ২১ দিনেই ৩৩ হাজার ৭৮ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছিলেন। সেবার ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলে। তবে, দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও ৫ হাজার আসন শূন্য ছিল।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে হজের নিবন্ধন শুরু হয়েছিল। এবার সাড়ে তিন মাস আগে ১৫ নভেম্বর থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এজন্য হয়ত প্রথমে সাড়া কম মিলছে। যারা হজে যেতে চান তারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোটা পূরণ হয়ে যাবে।

এই কর্মকর্তার দাবি, এবার গত বছরের চেয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৮২ হাজারের বেশি টাকা খরচ কমেছে। তাই খরচ বেশি এটা বলার সুযোগ নেই। হজে সৌদি আরব অংশে যে খরচ হয়, সেই খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়া। আর বাংলাদেশ অংশে বিমান ভাড়া বেড়েছে। যদিও এখনো বিমান ভাড়া চূড়ান্ত হয়নি। ফলে বিমান ভাড়া যদি কমে তাহলে হজের খরচ আরও কমে আসবে।

অন্যদিকে, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হজ প্যাকেজের খরচ বেশি হওয়ায় গত বছরও হজ যাত্রীদের সাড়া মেলেনি। এবারো প্রায় একই দশা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়সীমা পরে বাড়ানো হতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

হজে যেতে ইচ্ছুক একাধিক হজযাত্রী বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা অনেক বেশি। ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবকে এই প্যাকেজের অর্থ কমাতে হবে। নয়তো গত বছরের মতো এবারো হজ ফ্লাইট খালি যাবে।

বাংলাদেশ থেকে আগামী বছর হজ করতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি কোটায় ১ লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। গতবারের তুলনায় এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার আসন বেশি নিবন্ধন করার সুযোগ থাকছে।

এবার সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ হবে। বিশেষ হজ প্যাকেজের ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা খরচ হবে। অন্যদিকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে হাব। প্রথম প্যাকেজের (সাধারণ) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা। দ্বিতীয় প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার ৮১৮ টাকা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে।

২০২৩ সালে হজের নিবন্ধন শুরু হয়েছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২১ দিনে মোট নিবন্ধন করেছিলেন ৩৩ হাজার ৭৮ জন। এতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছিলেন ৭ হাজার ৪২০ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছিলেন ২৫ হাজার ৬৫৮ জন। নিবন্ধন শুরুর প্রথম ২১ দিনে ২৬ শতাংশ কোটা পূরণ হয়েছিল। গতবারের হজের চুক্তির কোটা অনুযায়ী আসন ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন।

এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অধিশাখার যুগ্ম সচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা অন্যান্যবারের তুলনায় এবার হজের নিবন্ধন অনেক আগ থেকে শুরু করেছি। নিবন্ধনের সংখ্যা নিয়ে এখনো চিন্তিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আশা করি যথাসময়ে কোটা পূরণ হয়ে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ