আমাদের অনেকের মনে কৌতূহল থাকে যে, একটি মোবাইল হারিয়ে গেলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কীভাবে সেটি উদ্ধার করে।
এ সম্পর্কে জানতে হলে আগে জানতে হবে আইএমইআই সম্পর্কে। এর ফুল ফর্ম হলো ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি। ফোন চেনার জন্য এটি একটি আইডেন্টিটি নম্বর।
জিএসএম, সিডিএমএ ও আইডিইএন আর কিছু স্টেরেলাইট ফোনের এ নম্বর দেওয়া হয়। এ নম্বর ১৫ সংখ্যার হলেও অনেক সময়ে ১৬-১৭ সংখ্যারও হয়। ফোন হারিয়ে গেলে ফোন খুঁজে পেতে আইএমইআই নম্বরটি সাহায্য করে।
একটি কোম্পানি যখন একটি ফোন তৈরি করে, তখন প্রতিটি ফোনের মধ্যে এক কিংবা দুটি আইএমইআই রাইট করে দেয়। এগুলো ফোনের মাদারবোর্ডের বায়োস সিস্টেমে রাইট করে দেয় ফোন কোম্পানিগুলো। একই নম্বর আবার সেই ফোনের বাক্সের মধ্যেও লেখা থাকে।
এবার আসি মূল বিষয়ে। ধরুন একজন লোকের ফোন হারিয়ে গেছে কিংবা চোর কেড়ে নিয়ে চলে গেছে। এই অবস্থায় কী কী করা উচিত এবং কীভাবে এ ফোন উদ্ধার করা যাবে।
ফোনটি হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে এরিয়াতে হারিয়েছে, সেই এরিয়া যে থানার অধীনে, দ্রুত বাসায় যোগাযোগ করে কিংবা যেভাবে হোক ফোনের বাক্সে কিংবা সেলস রিসিট থেকে আইএমইআই নম্বরটি সংগ্রহ করে সেই লোকাল থানায় দ্রুত জিডি করতে হবে।
জিডি করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা কিংবা ফোনটি উদ্ধার করার জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জিডিতে তার নম্বর ও নাম উল্লেখ থাকবে। সেই নম্বরে কল দিয়ে যোগাযোগ করবেন। অনেক সময় নম্বর থাকে না। তাই যিনি জিডি গ্রহণ করছেন, তাকে বলবেন তদন্ত অফিসারের নম্বর যাতে লিখে দেন।
তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি তার মতো করে ফোনটি খোঁজার জন্য আরও কিছু এনটিটি পুলিশের অন্য ডিপার্টমেন্টকে এ আইএমইআই ও জিডিটি ফরোয়ার্ড করবেন ফোনটি খোঁজ করার জন্য। বিশেষ করে ডিবি, সিআইডি, কাউন্টার টেররিজমের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ, র্যাব, পিবিআইসহ মোটামুটি অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট এসব নিয়ে কাজ করে।
তারা ফোনের কোনো তথ্য পেলে তখন ভিকটিম (ভুক্তভোগী) জিডিতে তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে নম্বর দিয়েছেন সেখানে তদন্ত অফিসার কল দিয়ে আপডেট জানান। মাঝে মধ্যে বিষয়গুলো অনেক লং প্রসেসও হয়ে যায়। কারণ অসংখ্য পেন্ডিং কেস থাকে সেজন্য।
এখন আসি, কীভাবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব ফোন উদ্ধার করে। তাদের কাছে বিশেষ কিছু সফটওয়্যার থাকে যেগুলার সাথে নেটওয়ার্ক অপারেশন মেইনটেইন টাওয়ার কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারগুলোর কানেকশন থাকে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে আইএমইআই সার্চ করলে সেই আইএমইআইয়ের ফোনে কোন সিম ব্যবহার হচ্ছে এবং কোন এরিয়াতে কোন লোকেশন এ ফোনটি আছে, সব কিছু দেখা যায়।
সাধারণত একেক দেশে একেক রকম সিস্টেম অবলম্বন করা হয়। আবার অনেক উন্নত রাষ্ট্রের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সরাসরি ইন্টারসেপ্টার সফটওয়্যারও ব্যবহার করে, যেগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী এবং তাতে অনেকরকম ফিচার থাকে। এগুলো সাধারণ মানুষের জন্য নয় বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জন্য তৈরি করা হয়।
লোকেশন যখনই পেয়ে যায়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তখনই সেই এরিয়াতে অভিযান পরিচালনা করে। নতুন ইনসার্ট করা সিমের তথ্য দেখে মোটামুটি কিছু ধারণা পাওয়া যায় সাসপেক্ট সম্পর্কে।
যদি সাসপেক্ট অন্য কারো নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিমও ব্যবহার করে, এতেও সমস্যা নেই। কারণ রিয়েল টাইম লোকেশন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অলরেডি আছে। এটি ডিভাইসের আইএমইআই ও জিপিএস সেন্সরের জয়েন্ট কোলাবরেশনে কাজ করে।
এভাবে অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে ফোনগুলো উদ্ধার হয়। এগুলা অনেক সময় কপালের ওপর নির্ভর করে। দেখা যায় সাসপেক্ট ফোন নেওয়ার পর অনেক লং টাইম বন্ধ রাখে, নতুন সিম লাগায় না। তখন আবার আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এ ফোনের তথ্য পায় না। এজন্য জিডি করে অপেক্ষা করতে হয়। যাদের কপাল ভালো তাদের ফোনগুলো দ্রুত উদ্ধার হয়ে যায়।
এবার আসি সচেতনতার বিষয়ে। আপনি ধরে নিলেন জিডি করার পরও আপনার ফোনটি পাওয়া যাবে না। আমি বলবো ফোনটি যদি না-ও পান, আপনার কমপক্ষে জিডি করে রাখা উচিত। এ জন্যই রাখা উচিত, কারণ আপনার নামে রেজিস্টার করা এ ফোনের মাধ্যমে যদি কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়, দেখা যাবে পুলিশ সেই অপরাধী কিংবা অপরাধ হওয়ার জায়গায় এই ফোনটি রিকভারি করে পায়, তখন আপনিও অপরাধী হিসেবে সন্দেহের তালিকায় থাকবেন।
এজন্য যখন ফোন হারাবে, সঙ্গে সঙ্গে জিডি করে ফেলুন। তাহলে উপরের কথার মতো ঘটনা হলে আপনার এ জিডি আপনাকে আইনের যেকোনো জটিলতা থেকে নিরাপদ রাখবে।