সিলেটে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা। জেলার সবকটি উপজেলা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
সবকটি নদীতে হু হু করে পানি বাড়ছে। নদীর পানি উপচে সিলেট নগরীও ভাসছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি তলিয়ে গেছে। অনেকে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উজানে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। জেলার সবকটি নদীতেই বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বেড়েছে সিলেট পয়েন্টেও। গতকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেট পয়েন্টে পানি সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২১ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। শেরপুর পয়েন্টে পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার। পানি বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও। এখানে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি সীমা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার।
তিনি আরো জানান, গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি বিপদসীমার ১২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কানাইঘাটের লোভা নদীর পানি বেড়ে ১৪ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ইসলামপুর পয়েন্টে ধলাই নদীর পানি পানি সীমা দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।
এক সপ্তাহ ধরে ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। দুইদিন ধরে বৃষ্টিপাত কম হলেও উজানের ঢলে নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার নতুন করে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী অন্তত ১০টি সড়ক তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি ও ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। মঙ্গলবার প্লাবিত এলাকার পানি আরো বেড়েছে। নগরের উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ার পাড়, সোবহানিঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সকালে নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অভিজাত এ এলাকার প্রধান সড়কে পানি হাঁটুর উপরে। পানি ঢুকে পড়েছে আশপাশের দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। বন্যাকবলিতদের জন্য নগরের কিশোরী মোহন ও মাছিমপুর বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে বন্যায় আগেই প্লাবিত হয়ে পড়া পাঁচ উপজেলা সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা কবলিত গ্রামবাসী গৃহপালিত পশু নিয়ে উচু ও নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলেছে। জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, উজানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। বিষয়টি আতঙ্কের। এ সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
জৈন্তাপুরের ইউএনও আল বশিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বন্যায় প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজ রাখাছি। বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাদের সর্তক থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের উদ্ধারে জরুরী নৌযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, সিলেট নগরীতে ১৬টি বন্যা আশয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সেবাও তারা পাবেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান বলেন, বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।