রাজধানীর ১৩ নং ওয়ার্ডের ২৭ বিজয় নগরের সাজভবন এপার্টমেন্ট মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠনে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট মালিকদের পাশ কাটিয়ে তাদের না জানিয়ে গঠন করা একটি কমিটিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ এনামুল হক আবুল অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাজভবন এপার্টমেন্টের বাসিন্দারা।
মোঃ আহসানউল্ল্যাহ চৌধুরীকে সভাপতি এবং সফিক উল্ল্যাহ নান্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় গত ১ এপ্রিল। সাজভবনের ৯০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে বেশিরভাগ মালিককে না জানিয়েই এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ল্যান্ড ওনার জি.এম ফয়সাল সাজ নূর। গঠিত কমিটিতে তাকে না জানিয়েই সহ-সভাপতি রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।বায়তুল মোকাররম মার্কেটের বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করা ফ্ল্যাট মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াকুব আলী প্রশ্ন তুলেছেন, একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কি কোনো এপার্টমেন্টের অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করতে পারেন?
গঠিত কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক শামিউর রহমান শামীম ও নির্বাহী সদস্য মাহফুজা আকরাম চৌধুরী জানান, তাদের সম্মতি না নিয়েই ওই কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা অত্যন্ত নাক্কারজনক।
এদিকে অবৈধভাবে গঠিত কমিটির সভাপতি মোঃ আহসানউল্ল্যাহ চৌধুরী জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর পূর্বের জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব ছিলেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের জাসাসের কমিটি গঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হয়ে বিএনপি নেতাকে সভাপতি করে সাজভবন এপার্টমেন্ট মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠনের নেপথ্যে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
সাজভবন এপার্টমেন্টের অন্যতম ফ্ল্যাট মালিক গোলাম মোহাম্মদ ফয়সাল সাজ নূর বলেন, আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে গড়ে তোলা এ ভবনের নৈমিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে আমাকে না জানিয়েই। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো, অবৈধ এ কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
তিনি বলেন, সাজ ভবনটি ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণ করেছেন আমার পিতা মরহুম মোল্লা নূর মোহম্মদ। এই ভবনে ৯০টি ফ্ল্যাট আছে। যার মধ্যে আমি, আমার মা, চাচা এবং আমার ভাইবোনদের মালিকানাধীন ৪৮টি ফ্ল্যাট। অবশিষ্ট ৪২টি ফ্ল্যাট ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করা হয়েছে। ভবনটির নৈমিত্তিক কাজ পরিচালনার জন্য বর্তমানে পাঁচ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের অন্যান্য ভবনের মতো আমরা মালিক পক্ষ (ল্যান্ড ওনার) আমাদের সম্পত্তি রক্ষা ও সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য সভাপতি পদে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কিছু না জানিয়েই বিএনপির জাসাস নেতা মোঃ আহসানউল্ল্যাহ চৌধুরী নিজেকে সভাপতি করে তার মনমতো একটি কমিটি গঠন করেছেন এবং ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ এনামুল হক আবুল ওই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত।
অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর অনুমোদিত অবৈধ ওই কমিটির সভাপতি বিএনপি নেতা মোঃ আহসানউল্ল্যাহ চৌধুরী সাজভবনের পার্কিং এলাকায় প্রায়ই দলীয় লোকজন নিয়ে মিটিং-সভা করে থাকেন। দলীয় লোকজন ধূমপান করেন। মহিলাদের দিকে কুদৃষ্টি নিয়ে তাকান বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ভবনের ভেতর দলীয় আড্ডার জন্য ফ্লাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের চলাফেরায় সমস্যা হওয়ায় তাকে নিষেধ করা হলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবেই তিনি গায়ের জোরে এই কমিটি গঠন করেছেন এবং তাতে কাউন্সিলরের অনুমোদন নিয়ে এসেছেন।
সাজভবন এপার্টমেন্ট মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ এনামুল হক আবুল বলেন, বিভিন্ন ভবন পরিচালনার জন্য মালিক সমিতি থাকে। সাজভবন পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা ওই ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের নিয়েই এবং তাদের জানিয়েই।
কমিটির সভাপতি মোঃ আহসানউল্ল্যাহ চৌধুরী বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা, এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা তা আমার জানা নাই।
কোনো কাউন্সিলর ব্যাক্তিগত কোনো ভবনের মালিক সমিতির অনুমোদন দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ভবনের ২৮ জন ফ্ল্যাট মালিক আমার কাছে এসে সর্বসম্মতিতে কমিটি গঠনের কথা জানান। তাদের অনুরোধেই আমি ওই কমিটিকে অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেছি। আমার নিজ এলাকার যে কোনো বিষয় দেখভাল করা আমার দায়িত্বের অন্তর্গত বলেই ফ্ল্যাট মালিকদের বিরোধ ঠেকাতে সবাইকে নিয়ে গঠন করা ওই কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছি। এটা অনিয়ম হতে পারে না।
তবে অন্যপক্ষ জানায়, কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল রাত ১২টার দিকে সাজ ভবনে প্রবেশ করেন এবং জাসাস নেতা আহসান উল্যার বাসায় বসে এ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। যা ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে। অন্য মালিকগন আরও জানান, এটি একটি চাপিয়ে দেয়া কমিটি। মতামত কিংবা অনুমতি না নিয়েই রাতের অন্ধকারে সুবিধা মতো অন্য মালিকদের নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের অনেকেই বর্তমান পাঁচ সদস্যের কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, নির্বাচন ছাড়া কোন কমিটিকে সাজভবনের ফ্ল্যাট মালিকরা মেনে নেবে না বলে নিশ্চিত করেছেন এবং প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন।