সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার এলেই মানুষের ধুম পড়ে মাছ-মাংস আর শাকসবজি কেনার। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এখন একদিনেই সপ্তাহের বাজার করে কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে চান। তবে, শুক্রবারকেন্দ্রীক মানুষের এই চাহিদাকে ঘিরে ব্যবসায়ীরাও নিয়ে থাকে নানা কৌশল। প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম বেড়ে যায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বিক্রেতারাও অকপটে স্বীকার করছে সপ্তাহ ব্যবধানে এমন দামের বিষয়ে।
মাংসের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, আজকের বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। গরুর কলিজাও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। তবে, খাসি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজি দরে, কলিজাও বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংসের দামে।
এদিকে, শুক্রবার উপলক্ষে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৬০-১৭০ টাকা, তবে অন্যান্য দিনে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা করে বিক্রি হয়। এছাড়াও লাল কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকা কেজি, যা অন্যান্য দিনে বিক্রি হয় ২৭০ টাকা কেজি দরে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি মাছের বাজারেও কিছুটা উত্তাপ দেখা গেছে। বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ টাকা, রুই মাছ ২৮০ টাকা, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি।
শুক্রবারকেন্দ্রীক সবজি বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে। শসা যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা, আজকের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়াও কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, লাল টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।এদিকে বাজারদর নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে নানা অভিযোগ আর ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, শীতের সিজনেও সবজির বাজারে সবকিছুর দাম বেশি, অথচ এই সময়ে অনেক কম থাকার কথা। তাদের অভিযোগ, বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেকারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আর একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে, সেটা আর কমতে চায় না। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে আনায় কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
মাহমুদ হাসান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি। মুরগির দামটা একটু কমেছিল, কিন্তু আজকে দেখলাম আবারও বেড়ে গেছে। এখন সবজির মৌসুম তারপরও সবজির দাম সেভাবে কমছে না।
গরুর মাংস বিক্রেতা সজিব হোসেন বলেন, মানুষের হাতে এখন টাকা পয়সা কম, যেকারণে আমাদের বেচাকেনাও কম। অথচ শুক্রবার এলেই আগে বিক্রি করে শেষ করতে পারতাম না, মানুষ এসে দাঁড়িয়ে থাকতো।
দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম আমরা সব সময় যে দামে বিক্রি করি, শুক্রবারেও সেই দামে বিক্রি করি। তবে অনেকেই আছে শুক্রবারে সমান ৭০০ টাকা বিক্রি করে। খাসির মাংসের দাম গত একমাসে কমেওনি, বাড়েওনি।
মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুজন মিয়া বলেন, শুক্রবারে মুরগির দাম হাল্কা বাড়তি থাকে। আমাদের কিনেই আনতে হয় বেশি দামে। দামটা বাড়ে পাইকারি বাজারে, যেকারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ে। দাম বেশি থাকলে আমাদেরই বরং ক্ষতি, বিক্রিও কমে যায়। কম দাম থাকলে মানুষ কিনতে আসে বেশি।
ব্যবসায় মন্দা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য দিনে বেচাকেনার নাই বললেই চলে। শুক্রবারে কিছুটা হয়। মানুষের ইনকাম কম, খাবেই কী, পরবেই বা কী।