বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) আমদানির অর্থ বাবদ ১৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার (এক দশমিক ৭৩৫ বিলিয়ন) পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে গেছে। যেখানে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ ছিল ৩৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
আকুর বিল সমন্বয়ের পর বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিন শেষ রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭০৬ কোটি (৩৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) ডলারে। এছাড়া সংকট কাটাতে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে গত দুই দিনে (মঙ্গল ও বুধবার) ১৩০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রিও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে মজুদ থাকা এই বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে সাড়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে)।
বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আকু একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে।
জুলাই-আগস্টের আকুর দেনা বাবদ গত বুধবার ১৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বুধবার যখন পরিশোধ করা হয় তখন যুক্তরাষ্ট্রে রাত ছিল। তাই বৃহস্পতিবার এটি সমন্বয় হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১২ জুলাই আকুর ১৯৬ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। তার আগে গত ১০ মে আকুতে ২২৪ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নামে।
এদিকে নানা শর্ত দিয়ে আমদানি ব্যয় কমানো হলেও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না। বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে ডলার বিক্রির চাপে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছর ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এর পর তা বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। তারপর থেকে গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
চলতি বছরের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে দাম। অপরদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকা দরে। গত আগস্টে যা ছিল ৮৫ টাকা।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা ডলারের মূল্য ঘোষণা দিলেও আমদানি পর্যায় ডলারের দাম নিচ্ছে ১০১ থেকে ১০৬ টাকা। আর নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৬ থেকে ১০৮ টাকা। খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এর আগে দেশে খোলা বাজারে ডলার গত ১০ ও ১১ আগস্ট নগদ ডলার ১২০ টাকায় উঠেছিল।