বয়স্ক ভাতা বন্ধ, সেই বৃদ্ধার ঘরে নেই খাবার

৭০ বছরের বৃদ্ধা ছখিনা বেগম। স্বামী আব্দুস সাত্তার স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগেই মারা গেছেন। তার দুই ছেলেই প্রতিবন্ধী। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ছখিনা বেগম এখন আর কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে একটি ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। ঘরের চালের টিন মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে থাকা যায় না। ঘরের বেড়ায় বড় বড় ফুটো হয়ে বাতাস ঢুকছে। নেই গরম কাপড়। ঘরে খাবারও নেই। বয়স্ক ভাতাই ছিল তার জীবনের অন্যতম সম্বল।

সম্প্রতি ছখিনা বেগমকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ছখিনা বেগম লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা। বয়স্ক ভাতা না পেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে তার।

গত শনিবার (১৩ নভেম্বর) ‌‌‘বয়স্ক ভাতা বন্ধের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানলেন তিনি ‌মৃত’ ‌শিরোনামে ছখিনা বেগমকে নিয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বৃদ্ধা ছখিনা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্যাঁতসেঁতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন তিনি (ছখিনা বেগম)। ঘরে কোনো খাবারও নেই। তিনি বেশ কয়েকদিন থেকে অসুস্থ থাকায় খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেননি।

জানা যায়, ছখিনা বেগমের নামে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জু স্বাক্ষরিত একটি মৃত্যু সনদ জমা দেওয়া হয়েছে। সনদে উল্লেখ আছে, উপজেলার নূরুল্লাপুর গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দনি প্রামাণিকের মেয়ে ছখিনা বেগম ৮ জানুয়ারি ২০২২ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।

বৃদ্ধা ছখিনা বেগম সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা পেয়ে আসছিলেন। হঠাৎ তাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে অন্য একজনের নামে ভাতা চালু করার জন্য সমাজসেবা অফিসে আবেদন করা হয়। চেয়ারম্যানের দেওয়া মৃত্যু সনদের কারণে বৃদ্ধা ছখিনার ভাতা সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে।

ছখিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ঘরে একা একা পড়ে থাকি, আমার কিছু নাই। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে যা পাই, তা দিয়ে কোনো মতে খেয়ে বেঁচে আছি। আমার দুই ছেলেও প্রতিবন্ধী। তারাই চলতে পারে না। আমাকে দেখবে কী করে।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ আগস্ট মাস থেকে আমার মুঠোফোনে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাটি জানতে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে আমি আমার নাতি শিমুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে ভাতা বন্ধের কারণ জানতে চাই। তখন জানানো হয়, ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ তাকে মৃত উল্লেখ করে দরখাস্ত দিয়ে ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। দরখাস্তে লেখা আছে, ‘৮ আগস্ট ছখিনা বেগম মারা গেছেন।’ এ কথা শোনার পর আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। পরে সেখানকার কর্মকর্তারা বলেন, চেয়ারম্যান নতুন করে আবার তাকে জীবিত দেখিয়ে দরখাস্ত দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জু বলেন, ভুলবশত এটা হয়ে গেছে। বৃদ্ধা ছখিনা বেগমের ভাতা পুনর্বহালের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাকে দেড় হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা জানান, মৃত্যু সনদ পাওয়া ওই বৃদ্ধার নাম আবারও ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তার যা যা দরকার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখছি। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৃদ্ধার ভাতা বন্ধ ছিল, সেটি চালু হয়েছে। আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আগামী দিনে যেন কোনো উপজেলায় এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ থাকব।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ