পৃথিবীতে বহু নোবেল বিজয়ীর কারাভোগের নজির আছে : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পৃথিবীতে বহু নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে দেশে দেশে মামলা হয়েছে। অনেকে শাস্তি ভোগ করেছেন এবং কারাগারেও ছিলেন… এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, সেই পুরস্কারের অর্থ কে কত টাকা পাবেন, এ নিয়েও নোবেল বিজয়ীরা একে অপরের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজী পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ডের রায় প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বহু প্রশ্ন আছে। গাজায় কবরে শান্তি স্থাপন করার জন্য কখন যে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে দেয়, সেটিও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপর বারাক ওবামাকে যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার দিলো, তিনি অবাক হয়ে গেলেন… বললেন, আমাকে কেন দেওয়া হলো! মালালাকে ১৪ বছর বয়সে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কোন সময় যে ১০ বছরের কাউকে দিয়ে দেয়, সেটি নিয়েও অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আদালত দণ্ডিত করেছেন। এরপর আপিল করার শর্তে তাকে আবার জামিনও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভ্রান্তি এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। এখানে সরকার কোনো পক্ষ নয়, মামলাও করেনি। মামলা করেছে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেই মামলায় শাস্তি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে যে, লাভের ৫ শতাংশ তার কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। এ যাবৎ কখনো তা দেওয়া হয়নি। এটি না দেওয়ায় শ্রম আইনের ৪, ৭, ৮, ১১৭ এবং ২৩৪ ধারার অধীনে মামলা দায়ের করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে দুইজন শ্রমিক নেতাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং দুইজন শ্রমিক নেতাকে তিন কোটি করে ছয় কোটি টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। দুজনকে ঘুষ দেওয়ার পরও টাকা না পাওয়ায় সাধারণ শ্রমিকরা মামলা করেছেন। সুতরাং এখানে স্পষ্টত একটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং এ কারণেই মামলা হয়েছে, শাস্তিও হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়ম ভঙ্গ, কর ফাঁকি, তার কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন অনুমোদিত সংস্থা থেকে তিন হাজার কোটি টাকা অপব্যবহার করার অভিযোগ আছে। ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির এমডি সরকারের মাধ্যমে নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। ১৯৯০ সালের সংশোধনী অনুসারে, এমডি নিয়োগের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসে স্থানান্তরিত হয়। এই পরিচালক বোর্ডের চেয়ারম্যান ১৯৯০ সালের ১৪ আগস্ট ড. ইউনূসকে এমডি হিসেবে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য অনুরোধ করেন।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত সাপেক্ষে ড. ইউনূসের নিয়োগে অনাপত্তি দেয়। এগুলো হচ্ছে, এমডির চাকরির শর্তাবলি ১৯৮৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৪ এর ৪ ধারার প্রবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, পরিচালক বোর্ড অধ্যাদেশের ৩৬ ধারার অধীনে নিয়ম তৈরি করবে, যা সরকারি গেজেট প্রকাশের পর কার্যকর হবে। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুসারে, একজন এমডি ৬০ বছর বয়সের সীমা অতিক্রম করতে পারবেন না। কিন্তু ড. ইউনূসের বয়স যখন ৫৯ বছর, ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত পরিচালক বোর্ড তার ৫২তম সভায় আইন ভঙ্গ করে রেজুলেশনে তাকে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এমডি হিসেবে নিশ্চিত করে। এটি গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের অনুচ্ছেদ ১৪ এর ৪ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার এই নিয়োগের অসৎ উদ্দেশ্য পরে প্রমাণিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২১ এবং ১২ এর ২ ধারা অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডিকে একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে তার চাকরির শর্তাবলি লঙ্ঘন করেছেন। একজন পূর্ণ-সময়ের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজের জায়গায় তার ঘন ঘন অনুপস্থিতি ছিল এবং সেই অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন কখনো নেওয়া হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ও তার পরিবারের সঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। এই সমস্ত কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই এবং একজন ইহুদি… যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করছে। ডেভিড বার্গম্যানকে একটু জিজ্ঞেস করেন, এ নিয়ে তার কী বক্তব্য। একটি নিবন্ধন যদি সে লিখত, তাহলে আমরা তার অবস্থানটা জানতে পারতাম। ড. ইউনূসকে কখনো শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় না।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমি এককভাবে কারো নাম বলছি না, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, তারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না, তারা বিদেশিদের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা মিশনে মিশনে পার্টিতে যায়, আবার বিভিন্ন দেশের সংস্থা থেকে অর্থ পায় এবং ট্যুরে যায়। তারা তাদের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা যেটি বলে সেটিই করে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমরা তাদের বক্তব্যগুলো ভালো করে প্রচার করি। এটা না দিলে কিন্তু তাদের বাজার মূল্যটা কমে যেত। আমরাই বাজার মূল্যটা বাড়িয়ে দেই।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ