পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী, আটবার এমপি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসন থেকে অষ্টম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর পঞ্চমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন তিনি। বিশ্ব রাজনীতিতে এমন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী নেতার সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা।

রোববার ( ৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম শেখ হাসিনার বিজয়ী হওয়ার ঘোষণা করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম নিজাম উদ্দিন লস্কর পেয়েছেন ৪৬৯ ভোট।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপলগঞ্জ থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে আওয়ামী লীগ।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮ টি সংসদীয় আসন লাভ করে এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে । মোট প্রদত্ত ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগ একক দল হিসেবে ৩০.১ % লাভ করে , যা সরকার গঠনকারী দল বিএনপির থেকে মাত্র ০.৭% কম ।

এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হয়ে আওয়ামী লীগ সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি পুনরায় গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসে।

২০০১ সালে দেশের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আবারও সরকার গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অবরাধে দোষী রাজকারদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করে। এই নির্বাচনেও শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো সংষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের পর ২১শে আগস্টের মতো নারকীয় হত্যাকান্ড ঘটে। এতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে নিশ্চিন্ন করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়।

দুর্বার আন্দোলনে সফল হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যায় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর রেকর্ড সংখ্যক বিপুলেআসনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করে। আর গোপালগঞ্জ থেকে আবারও বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে আবারও সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। তিনি টানা দ্বিতীয় আর সর্বমোট তিনবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও গোপালগঞ্জ আসন থেকে সপ্তমবারের মতো নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে। আর টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা।

আর সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ -৩ আসন থেকে জয়লাভ করে রের্কড গড়েন শেখ হাসিনা। তিনি দেশে সর্বোচ্চবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা ব্যতীত দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এইবার তাকে টপকে শেখ হাসিনা অষ্টমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড গড়লেন। আর টানা চতুর্থবার ও সর্বমোট পঞ্চমারের মতো হলে সরকার প্রধান।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ