ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া চলমান মামলাগুলো নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতায় বিচার হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইনটি উঠবে, সেখানে এটি পাস হবে।

আজ সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা কক্ষে এ বৈঠক হয়েছে।

আইনটিকে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিলেটিভ (আইনপ্রণয়ন) বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মন্ত্রিসভায় নতুন আইনটি উত্থাপন করেন।

এরপর সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে। যদি এখন বলি—বাতিল করা হয়েছে, তাহলে আপনারা প্রশ্ন করবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারাই-তো এ আইনে আছে। তাহলে আপনি কেন বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। যে কারণে আমি পরিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেছি।

ডিজিটাল প্রগ্রেস (অগ্রগতি) সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে আইনটির নাম দেয়া হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার জন্য যেসব ধারাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ছিল, সেগুলো এখানে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। সেইগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, যোগ করেন মন্ত্রী।

তিনি জানান, দ্বিতীয়ত, যেটা করা হয়েছে—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনেকগুলো ধারা, যেমন মানহানির যে ধারাটা ছিল, সেই ধারায় আগে শাস্তি ছিল কারাদণ্ড। সেই কারাদণ্ডের জায়গায় এখন জরিমানার বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মানহানির একমাত্র সাজা জরিমানা।

আইনমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১-এ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত—এসব নিয়ে যদি কেউ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। সেটির সাজা ছিল ১০ বছর কারাদণ্ড, সেটিকে কমিয়ে এখন সাত বছর করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, যেগুলো টেকটিক্যাল অপরাধ, যেগুলো সাইবার সিকিউরিটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সবসময়ই জনগণের কথা শোনার সরকার ছিল, যেটাকে ইংরেজিতে আমরা বলি, উই আরও অ্যা লিসিনিং গভর্নমেন্ট। এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অপব্যবহার কিংবা মিসইউজ রোধ করতে আমরা নাম পরিবর্তন করেছি। যেমন, আগে মানহানিতে কারাদণ্ড ছিল, সেখানে এখন কারাদণ্ড নেই।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলে একটা মানসিক চাপ থেকে যায়। স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনে একটি মানসিক চাপ থাকে। সেটাকেও আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েছি। যে কারণে আমরা পরিবর্তন করেছি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কি সংশোধন নাকি নতুন আইন হিসেবে আসছে, প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন আইন হিসেবে আসছে।

তার মানে তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর থাকছে না, বাতিল হয়ে গেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি, সঠিকভাবে বলার জন্য, পরে আর ব্যাখ্যা দিতে চাই না—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। নিশ্চয়ই নামটি নতুন করে দেয়া হয়েছে। যেসব ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে, ব্যাপারটি হচ্ছে, এটি যেভাবে করা হয়েছে, সেভাবে করা যেতো। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সংশোধন করা যেতো।

তিনি বলেন, আইনে ও নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল, সেটি কমানো হয়েছে। যেখানে উপধারা দিয়ে কিংবা দ্বিতীয়বার পুনঃপুনবার করলে সাজা দ্বিগুণ হয়ে যেত, সেই সব ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। যে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা না, সাইবার নিরাপত্তা আইন নামেই এটি পরিবর্তন হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রহিতকরণ ও হেফাজতকরণের প্রভিসন রেখে আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিরাপত্তা আইন করেছি।

পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের যে ধারাটি ছিল, সেটি কি পরিবর্তন হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিজিটাল অপরাধের ক্ষেত্রে অনেক সময় যে যন্ত্র দিয়ে সেটি করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো জব্দ না করা হয়, তাহলে সাক্ষ্যপ্রমাণ হারিয়ে যাওয়ার একটি শঙ্কা থাকে। সে কারণে আমার মনে হয়, ৪৩ নম্বর ধারাটি থাকার প্রয়োজন। এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ নম্বর ধারায় যে প্রভিসন ছিল, সেটি আছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ