তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও বিএনপির রুহুল কবির রিজভী শিক্ষিত মানুষ বলে জানতাম। তারা শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতের মত বক্তব্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে পারে- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের এ বক্তব্য এবং বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে গেছে- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদে ব্যয় হচ্ছে জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। সরকারি ঋণ হচ্ছে জিডিপির ৩৬ শতাংশ। জিডিপির ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত সরকারি ঋণ নেওয়া যায়। সেই জায়গায় আমাদের ঋণ আছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম আছে। আমাদের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৬ শতাংশ। জিডিপির ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ নিরাপদ। সে জায়গায় আমরা বৈদেশিক ঋণ নিয়েছি জিডিপির মাত্র ১৬ শতাংশ। এ অর্থনৈতিক ইনডেক্সগুলো যে রাজনীতিবিদরা পড়েন না, তাদের কী বলব?
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা এক জিনিস নয়। বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধ করার ক্ষেত্রেও কখনো দেরি করেনি, সময়মতো ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরের দিকে। জি এম কাদের শিক্ষিত মানুষ বলে জানতাম। তিনি কেন বিএনপির রিজভীর মতো কথা বললেন, কিংবা অশিক্ষিত-মূর্খের মত কথা বললেন, তা আমার বোধগম্য নয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কদিন আগে ব্লুমবার্গ পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন দেশের ইনডেক্স প্রকাশ করছে। তাতে ২৫টি দেশের নাম দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় অনেক বড় বড় দেশ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের নাম নেই। এই সংবাদগুলো কি এ সমস্ত রাজনীতিবিদরা পড়েন না? না পড়েই তারা যে সমস্ত বক্তব্য রাখছেন, এগুলো তো গুজব রটানোর সামিল। আমি আশা করব, শিক্ষিত মানুষেরা যেন অশিক্ষিতের মতো কথা না বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণেই ব্লুমবার্গের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যে ডাটা সংগ্রহ করেছে, সেখানে পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, মেক্সিকো, মরক্কোসহ বহু দেশের নাম থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নাম নেই। আমাদের রাজনীতিবিদ যারা এ নিয়ে কথা বলছেন, তাদের বলব একটু পড়াশোনা করার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইনের শাসন আছে বিধায় আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্যকে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জেলে যেতে হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচার হয়। বিএনপি আইন আদালত মানে না, সেজন্য তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, আদালতের সাথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আদালত কর্তৃক শাস্তি পাওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেজন্য মির্জা ফখরুলের উচিত বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো।
নির্বাচন কমিশনের সংলাপে বিএনপি যাবে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথমত বিএনপি তো নির্বাচনকেই ভয় পায়। নির্বাচনকে যেহেতু ভয় পায়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন সংলাপে যাবে না বলে খবর বেরিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। আশা করব, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, তারা ইসির সংলাপে যাবে। তাদের আপত্তি থাকলে সেখানে গিয়ে জানিয়ে আসবে।
বিএনপির রিজভীর বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তার বক্তব্যের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তিনি সবসময় উদভ্রান্তের মতো কথা বলেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় উদভ্রান্তের মতো কথা বলেছেন, নির্মিত হয়ে যাবার পর উদভ্রান্তির মাত্রা আরও কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গেছে। করোনার টিকা দেওয়ার সময় নানা গুজব রটানোর সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল।