খাড়াভাবে বিধ্বস্ত হয় চীনের বিমানটি, যাত্রীদের বাঁচার সম্ভাবনা নেই

চীনের ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ১৩২ জন আরোহী নিয়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের গুয়াংশি অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই বিমানটিতে ধরে যাওয়া আগুন পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বিমান বিধ্বস্তের একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড়ের গায়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষে আগুনের বিশাল কুণ্ডলি ও ঘন ধোঁয়া উড়ছে। বিধ্বস্ত এই বিমানের কোনো আরোহীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে চীনের গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে চীনা সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি বলছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর গুয়াংশির পাহাড়ের বাঁশঝাড়ে আগুন ধরে গেছে। গুয়াংশির একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে চীনা এই দৈনিক বলছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মাঝে কোনো যাত্রীর বেঁচে থাকার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটির বিধ্বস্তের ভয়ঙ্কর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিমানটি গুয়াংশির উঝৌ এলাকার আকাশে ৩ হাজার ২২৫ ফুট উচ্চতায় চলার সময় আচমকা পাহাড়ে আছড়ে পড়ছে। এ সময় বিমানটি একেবারে খাড়াভাবে অর্থাৎ বিমানের সামনের অংশ নিম্নমুখী এবং পেছনের অংশ আকাশের দিকে থাকা অবস্থায় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিধ্বস্ত হয়।

চীনের বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রশাসন (সিএএসি) বলছে, বোয়িং ৭৩৭ এর এমইউ৫৭৩৫ ফ্লাইটটি কুনমিং শহর থেকে গুয়াংঝু যাচ্ছিল। গুয়াংশি অঞ্চলের উঝৌ এলাকার আকাশে থাকাকালীন বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমানটিতে ১২৩ জন যাত্রী এবং ৯ জন ক্রু ছিলেন। যদিও চীনের সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বিধ্বস্ত বিমানে ১৩৩ জন ছিলেন বলে জানানো হয়েছে।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম বলেছে, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের ওই বিমানটি কুনমিং শহর থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে উড্ডয়ন করেছিল।

চায়না এভিয়েশন রিভিউ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিমান বিধ্বস্তের একটি ভিডিও টুইট করা হয়েছে। ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও টুইট করে বলা হয়েছে, এমইউ৫৭৩৫ বিমানের শেষ সেকেন্ড। এটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ব্যাপক গতিতে বিমানটির নাক বরাবর বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও বলে দাবি করেছে চায়না এভিয়েশন রিভিউ।

ফ্লাইট ট্র্যাকার ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোর বলছে, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের বিমানটি গুয়াংঝু যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেলা ১টা ১১মিনিটে কুনমিং থেকে উড্ডয়ন করেছিল। বিমানটির সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত হয়েছিল ২টা ২২মিনিটে। সেই সময় গুয়াংশির উঝৌ এলাকার আকাশে ৩ হাজার ২২৫ ফুট উচ্চতায় ঘণ্টায় ৩৭৬ নট (৬৯৬ কিলোমিটার) গতিবেগে বিমানটি চলছিল।

বিমানটি মাত্র ১ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ব্যবধানে ২৯ হাজার ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে ৩ হাজার ২২৫ ফুট উচ্চতায় নেমে আসে। এর পরপরই বিমানটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গত এক দশকে বিশ্বের অন্যতম সেরা নিরাপত্তার রেকর্ড ধরে রেখেছে চীনের বিমান পরিবহন শিল্প। এভিয়েশন সেইফটি নেটওয়ার্কের তথ্য বলছে, চীনে সর্বশেষ প্রাণঘাতী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছিল ২০১০ সালে। ওই সময় হেনান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী এমব্রায়ের ই-১৯০ বিমান বিধ্বস্তে অন্তত ৪৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ