কমলো টাকার মান, ১০০ টাকায় মিলছে ৭৬ রুপি

দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। ফলে টাকার বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ডলারের দাম। শুধু ডলার নয়, ভারতীয় রুপিও এখন টাকার বিপরীতে বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

গত দুদিনে টাকার রেকর্ড দরপতন হয়েছে। বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের ১০০ টাকার মান নেমে দাঁড়ায় ৭৬ রুপিতে। মঙ্গলবারও এর মান ছিল ৮৪ রুপি। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৫২ শতাংশ বা ৮ টাকা কমে গেছে। এতে করে আমদানিকারক ও পর্যটকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যেখানে ১০০ টাকার বিনিময়ে ৮৪ রুপি পাওয়া যেত, এখন ৭৬ রুপি পাবে।

ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক মার্কিন ডলারে বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য এসে দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৫৮ রুপি। একই দিন এক ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার মান দাঁড়িয়েছে ১০৪ টাকা ২৯ পয়সা। একদিন আগেও এক ডলারের দেশীয় মুদ্রার মান ছিল ৯৬ টাকা।

বৃহস্পতিবার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ ডলার বেচাকেনা হচ্ছে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ হাউজ ও ডলার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১৪ টাকা।

এখন কোনো বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে যাওয়ার সময় যদি নগদ ডলার কিনে নিয়ে যায় তার খরচ করতে হবে ১১৪ টাকা। ওই ডলার ভারতে ভাঙাতে বা বিনিময় করতে গেলে সে পাবে ৭৯ রুপি। বাংলাদেশি পর্যটকদের বৈধভাবে ভারতে বাংলা টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাজারে ডলার সংকট থাকায় অনেকেই অবৈধভাবে বাংলাদেশি টাকা নিয়ে যান। আর এ সুযোগ নেন ভারতীয় মুদ্রা বিনিময়কারীরা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন ১০০০ টাকার বিপরীতে মাত্র ৭০০ রুপি দিচ্ছেন ভারতীয় মুদ্রা বিনিময়কারীরা। এক মাস আগেও ৮০০ থেকে ৮২০ রুপি পাওয়া যেত।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ডলার রেট বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ বাজারে ডলার সংকট। আমদানি বেশি-রপ্তানি কম হওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন এটা কাটিয়ে তুলতে হলে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে।

রেমিট্যান্স কিছুটা কমে গিয়েছিল এখন আবার বাড়ছে, এটাকে ধরে রাখতে হবে। ডলার সংকট যতদিন পর্যন্ত না কাটবে ততক্ষণ এই অস্থিরতা কমবে না— বলেন মির্জ্জা আজিজ।

ভারতীয় রুপি শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যদিও আমরা রুপিতে তেমন লেনদেন করি না। তবে ডলারের দাম বেড়ে গেলে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। ভারত থেকে আমাদের অনেক আমদানি হয়, এটার খরচ বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ ভারতে যায় ভ্রমণ ও চিকিৎসার কারণে তাদের খরচ বেড়ে যাবে। তাই মোটকথা বাজার স্থীতিশীল করতে হলে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। রপ্তানি-রেমিট্যান্সে জোর দিতে হবে বলে জানান সাবেক এ অর্থ উপদেষ্টা।

এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মূল্য পরিবর্তন করে। সরকারের বিভিন্ন আমদানির বিলসহ বাজারে ডলার সরবরাহ ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রেটে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতো, এতোদিন সেই রেটই প্রকাশ করছে। এটাকেই আন্তঃব্যাংক ডলার রেট বলা হতো। তবে গতকাল থেকে তা পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দর ‘নয়’, ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে লেনদেন করা ডলারের দর প্রকাশ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তঃব্যাংক লেনদেন এবং গ্রাহক লেনেদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন এটা আর নির্ধারণ করবে না।

সে অনুযায়ী ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ১৪ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা দেওয়া আছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ