পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন কার্যত ইমরান-মুখী জোয়ার চলছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং উপনির্বাচনগুলোতে সেই আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। আর সর্বশেষ প্রকাশ্য দিবালোকে গুপ্তহত্যার চেষ্টার শিকার হওয়ার পর সাবেক এই তারকা ক্রিকেটারের প্রতি মানুষের সমর্থন যেন আরও বেড়েছে।
এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও ইমরান খানের গুরুত্ব ও কভারেজ বেড়েছে। আর সেখানেই আগাম নির্বাচনসহ অনবরত নিজের দাবিগুলো তুলে ধরছেন তিনি। এতেই অনেকটা চাপে পড়েছে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকার।
তবে চাপ বাড়লেও শেহবাজসহ দলের প্রধান নওয়াজ শরিফ ইমরানের সেই চাপের কাছে মাথা নত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রধান মুহাম্মদ নওয়াজ শরিফ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্ষমতাসীন জোট সরকার ইমরান খানের পিটিআই-এর চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। বিশেষ করে আগাম নির্বাচন এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে পিটিআই যে আন্দোলন করছে সেটি মেনে নেওয়া হবে না।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনের জন্য মিশর সফর শেষ করার পর বুধবার লন্ডনে পৌঁছান শেহবাজ শরিফ। পরে লন্ডনের অ্যাভেনফিল্ডের ফ্ল্যাটে দুই ভাইয়ের দেখা হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে কেবল নওয়াজ শরিফ, শেহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ, সুলেমান শরিফ, হাসান নওয়াজ, হুসেইন নওয়াজ এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নওয়াজ শরিফ তার ছোট ভাই শেহবাজকে ‘পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে’ এবং ‘কোনও ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করতে’ পরামর্শ দেন। এছাড়া পাকিস্তানের আগামী নির্বাচন যথাসময়ে আয়োজন এবং ইসলামাবাদে ইমরান খানের পরিকল্পিত লংমার্চ আইনি উপায়ে মোকাবিলা করা হবে বলে দুই ভাই সিদ্ধান্ত নেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অ্যাভেনফিল্ডে পৌঁছে মিডিয়ার সাথে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে, আলহামদুলিল্লাহ। দোয়া করি পাকিস্তান ফাইনালেও জিতুক। এই জয়ে গোটা জাতিকে অভিনন্দন।’
বড় ভাই নওয়াজের সঙ্গে পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধানের নিয়োগ নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে শেহবাজ বলেন: ‘আমি আজ আমার বড় ভাই এবং আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি অনেক দিন পর তাদের এবং তাদের সন্তানদের সাথে দেখা করছি।’
শেহবাজ এর বেশি আর কিছু বলেননি। তবে নওয়াজের সঙ্গে বৈঠক শেষ হওয়ার পর শেহবাজকে আবারও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: ‘আমার ভাই, আমার ভাগ্নী, আমার ভাগ্নে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে একটি পারিবারিক বৈঠক ছিল। আমরা একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছি এবং গল্প-সল্প করেছি। পাকিস্তানের জয়ে আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই।’
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বৃহস্পতিবার আবারও নওয়াজ-সহ দলের আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে দেখা করবেন শেহবাজ। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তার তৃতীয় লন্ডন সফর।
কিন্তু শেহবাজ শরিফের এবারের লন্ডন সফর বেশ গুরুত্ব বহন করছে। কারণ আগামী ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর এর দুই সপ্তাহ আগে লন্ডনে তার সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মূলত নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়ে শেহবাজ শরিফ বড় ভাই নওয়াজের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলে জানা গেছে।