আসন্ন বাজেট: দাম বাড়তে পারে ভবন নির্মাণ সামগ্রীর

দেশে ক্রমাগত নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে থাকার মধ্যেই সিমেন্টের কিছু পণ্যের উপর ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স বাড়তে পারে আগামী বাজেটে। কিছু পণ্যের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক হার বাড়তে পারে। বাড়তে পারে সিরামিকের কাঁচামাল আমদানির শুল্কহারও।

এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এলাকায় জমি নিবন্ধনের ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ ও ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রিতে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স বাড়তে পারে।

এসব কারণে সার্বিকভাবে আগামী বছর নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববাজারে নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামালের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত এক বছরে রড, সিমেন্ট, ইট ও অন্যান্য পণ্যের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। নতুন করে ভ্যাট-ট্যাক্স এর চাপ বাড়লে এ খরচ আরো বেড়ে যেতে পারে, যা একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা মানুষের উপর নতুন চাপ তৈরি করবে, অন্যদিকে এসব খাতের বিক্রি কমে সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমেও শ্লথগতি তৈরি করতে পারে।

এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে দেওয়া ভ্যাট ও অ্যাডভান্স ট্যাক্স পরবর্তীতে সিমেন্ট তৈরি করে বিক্রির পর সমন্বয়কালে প্রতি ব্যাগে কোম্পানিভেদে আরো ৫ থেকে ৭ টাকা করে ভ্যাট দেওয়া হয়, যা নীট ভ্যাট হিসেবে পরিচিত। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে বিক্রির দর বিবেচনায় নীট ভ্যাট আরো অনেক বেশি হওয়া উচিত। বাজেটে সব কোম্পানির ক্ষেত্রে এ ভ্যাট প্রতি ব্যাগে ২০ টাকা হতে পারে, যা হবে অনেকটা ট্যারিফ ভ্যাট এর মত।

অন্যদিকে এলিভেটর আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহারও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি শফিকুল হক তালুকদার বলেন, “বর্তমানে কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের দাম ২০ শতাংশের উপরে বেড়েছে গড়ে। ফলে অনেক প্রকল্পের কাজ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করার পর আর করছে না। এতে উন্নয়ন কাজের সময় ও ব্যয় বেড়ে গেছে। নতুন করে দাম বাড়লে তা ফের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে অনেক ডেভেলপার কোম্পানির অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি কমে গেছে। কারণ দাম অনেক বেড়ে গেছে।”

এসব কারণে অনেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ব্যাংক ঋণ পরিশোধও আগামী দিনগুলোতে কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

সরকারের উপর রাজস্ব বাড়ানোর চাপের কারণে বেশকিছু খাতের উপর এবার ট্যাক্স হার বাড়ানো এবং ভ্যাট ও শুল্ক হারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি বলেন, “দেশে অনেক খাতকে সরকার ট্যাক্স সুবিধা দেওয়ায় (হার কম বা প্রত্যাহার) সেসব খাত এখন ভালো করছে। এখন রাজস্ব বাড়ানোর চাপ রয়েছে, এজন্য যেসব খাত ভালো করেছে, তাদের উপর কর বাড়াতে হবে।”

সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর বড় অংশই ভ্যাট দেয় এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) অফিসে।

এলটিইউ-ভ্যাটের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাজারদর বিবেচনায় ভ্যাট আদায় করতে হলে প্রতি ব্যাগে নীট ভ্যাট আসবে ৪০ টাকা। এ ধরণের একটি সুপারিশও দেওয়া হয়েছিলো।”

“যেহেতু বাজারদর মনিটর করা কঠিন, এজন্য সব কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতি ব্যাগ হিসেবে একই ভ্যাট আদায় করার সুপারিশ করা হয়েছিলো”, বলেন তিনি।

বর্তমানে সিমেন্টের ক্লিংকার আমদানিতে ১৫% ভ্যাট, ৩% অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স, ৩% অ্যাডভান্স ট্যাক্স, প্রতি টনে ৫০০ টাকা কাস্টমস ডিউটিসহ শুল্ক কর প্রায় ২৭%।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ