অং সান সু চির সঙ্গে আলোচনায় রাজি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গৃহবন্দি থাকা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে আলোচনায় রাজি দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। তিনি বলেছেন, জান্তাচালিত আদালতে সু চির বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর চলমান সংকটের অবসান ঘটাতে তার (সু চি) সঙ্গে আলোচনার জন্য জান্তার দ্বার উন্মুক্ত।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান একথা জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। বিবৃতিতে মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ‘আইন অনুসারে সু চির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা তার প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে (আলোচনার বিষয়টি) বিবেচনা করতে যাচ্ছি।’

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ৭৭ বছর বয়সী অং সান সু চির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় এক ডজন মামলা দায়ের করে জান্তা সরকার। মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোর জান্তানিয়ন্ত্রিত আদালতেই সেসব মামলার বিচার চলছে।

এএফপি বলছে, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন অভিযোগে অং সান সু চিকে এখন পর্যন্ত ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সু চির বিরুদ্ধে আরও কয়েক দশকের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হতে পারে।

মূলত আবদ্ধ একটি জান্তা আদালতে এই বিচার চলছে এবং সেখানে একাই লড়াই করছেন সু চি। এই বিচার কার্যক্রম থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখা হয়েছে। এমনকি সু চির আইনজীবীরাও মিডিয়ার সাথে কথা বলা থেকে বিরত ছিলেন। এছাড়া সু চির এই বিচার কখন শেষ হতে পারে তার কোনো ইঙ্গিতও এখন পর্যন্ত দেয়নি জান্তা।

গত জুলাইয়ে জান্তার একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেছিলেন, গত বছর সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল তা সমাধানের জন্য সু চির সঙ্গে জান্তা সরকারের সংলাপে বসাটা ‘অসম্ভব নয়’। জাও মিন তুন সে সময় এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বলতে পারি না যে (সু চির সঙ্গে আলোচনা) অসম্ভব।’

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নোলিন হেইজার প্রথমবারের মতো মিয়ানমার সফর করেন। গত বছর এই পদে নিযুক্ত হওয়ার পর এবারই প্রথম তিনি দেশটিতে যান এবং জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংসহ অন্যান্য শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন।

কিন্তু এই সফরের সময় তাকে সু চির সাথে বৈঠক করতে দেওয়া হয়নি। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, নোলিন হেইজারের এই সফরের ফলে সামরিক বাহিনীর রক্তাক্ত দমনপীড়ন বন্ধ এবং অভ্যুত্থানের বিরোধীদের সাথে জান্তাকে সংলাপে রাজি হবে; এমন বিষয়ে তারা খুব কমই আশাবাদী ছিল।

এএফপি বলছে, স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর তথ্য মতে, ক্ষমতা দখলের পর থেকে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর দমন অভিযানে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ