চুয়াডাঙ্গায় গত দুই দিন তীব্র তাপপ্রবাহের পর আজ থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যেতে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছে।
হিট স্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক জামিনুর হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা ১৪ দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে সেটাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। আগামী ২১ এপ্রিলের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালের ২ জুন ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১২ সালের ৪ জুন ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৪ সালের ১৩ মে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। শহরের বেশ কিছু সড়কের পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের অলিগলি, গ্রাম-গঞ্জে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, তীব্র গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও যারা রোজায় থাকছেন না তাদেরকে ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমিও দেখেছি শহরের কিছু স্থানে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। তবে পিচ বেশি গলে গেলে খোয়াগুলো নরম হয়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তায় অনেক সময় ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে যায়। পিচ গলে গেলে যান চলাচল করলে সেই ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে পানি ঢুকতে পারে না। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তেমন পর্যায়ে গেলে বা কেউ জানালে আমরা মেরামত করব।
চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়। সন্ধ্যার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।