লঞ্চে ধাক্কা দেওয়া সেই কার্গোসহ ৯ জন আটক

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়া সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসীকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে চর সৈয়দপুরের আল আমিননগর এলাকায় দুর্ঘটনার পরপরই ওই কার্গোটি মুন্সিগঞ্জের হোসেন দ্য ডকইয়ার্ডে নোঙ্গর করে। সেখান থেকেই কার্গোটি আটক করে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, কার্গো জাহাজ এমভি রূপসীকে আটক করা হয়েছে। এর মাস্টার, চালকসহ সব কর্মী পালিয়েছে। তবে জাহাজটি থেকে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় লঞ্চডুবি

লঞ্চডুবির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় নৌকার মাঝি সৈয়দ আলী বলেন, আমি দূর থেকে দেখলাম- বড় জাহাজটা যাত্রীবোঝাই লঞ্চটারে ধাক্কা দিতে দিতে ডুবাইয়া দিল। কিছু লোক লাফ দিয়া পানিতে পড়তে পারলেও ভেতরের যাত্রীরা নদীতে লাফ দিতে পারে নাই। তারা লঞ্চসহ নিচে তলাইয়া গেছে। কয়েকজন হয়ত ডুব দিয়া উঠতে পারছে, কিন্তু বেশিরভাগই পানির নিচে ডুইব্বা গেছে।

তীরে নোঙর করা একটি কার্গো জাহাজের কয়েকজন শ্রমিক জানিয়েছেন, চোখের সামনে দেখলাম বড় জাহাজটি ছোট লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দিল। মূলত যে স্থানে লঞ্চটি ডুবেছে সেখানে কেনো যাত্রী পারাপারের ঘাট নেই। কিছুটা দূরে কয়লা ঘাট। সেখানে লঞ্চ থামে, নৌকা আছে পারাপারের। একদিকে ঘাট নাই, অন্যদিকে নদীর মাঝখানে হওয়ায় আশপাশে কোনো নৌকা বা ট্রলার ছিল না। থাকলে অনেককেই বাঁচানো যেত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, মূলত দোষটা যাত্রীবাহী লঞ্চের চালকেরই বেশি। তিনি লঞ্চটা হঠাৎ টার্ন করে আড়াআড়ি করতেই পেছনে থাকা জাহাজটি ধাক্কা দেয়। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, পেছনে এত বড় মালবাহী জাহাজটা লঞ্চের চালক দেখে নাই কিভাবে? ওই জাহাজের গতিও বেশি ছিল। তাই লঞ্চটি ডানে-বায়ে ঘোরানোর আগে লঞ্চের চালকের উচিত ছিল বিষয়টি মাথায় রাখা। তাছাড়া মালবাহী জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করলেও সেটির গতি কমাতে বেশ সময় লাগে।

এদিকে নদীর দুই পাড়ে থাকা শত শত মানুষ অভিযোগ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জগামী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলি মান্ধাতা আমলের এবং ছোট আকারের। এ ছাড়া এসব লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী বহন করা হয় বিআইডব্লিউটিআইয়ের নাকের ডগায়। কারণ বিআইডব্লিউটিআইয়ের কার্যালয়টি সেন্ট্রাল নদী বন্দরেই অবস্থিত। বহু বছর ধরে এই রুটে অনেক ব্যবসায়ী নতুন ও আধুনিক লঞ্চ সংযোজন করার ইচ্ছা করলেও লঞ্চ মালিক সমিতির কারণে সেটি সম্ভব হয় না। এসব লঞ্চে নেই পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী বয়া বা লাইফ জ্যাকেট। লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটলে কিংবা ঈদের মৌসুম আসলেই সেগুলো রঙ করে নতুন বানানো হয়।

ক্ষোভ প্রক্শা করে তারা আরও বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই শুধু তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু সারা বছর যাদের এসব দেখভাল করার কথা তারা নীরবতা পালন করেন, আর প্রাণ হারিয়ে পরিবারগুলো নিস্ব হই।

বস্তা ধরে ভেসে বাচঁলেন মোকসেদা

বস্তা ধরে ভেসে প্রাণে বাচেঁন শীতলক্ষ্যায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী মোকছেদা বেগম। লঞ্চডুবির পর একটি ট্রলার এসে তাকে উদ্ধার করলে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন মোকছেদা।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, দুপুর ২টার কিছুক্ষণ আগে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে আসে যাত্রীবাহী লঞ্চটি। লঞ্চটিতে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল। কার্গো জাহাজটি যখন পেছন থেকে লঞ্চটিকে ঠেলছিল তখন দোতলায় ছিলাম আমি। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নদীতে ভেসে থাকা একটি বস্তা আঁকড়ে ধরি। পরে সেখান থেকে একটি ট্রলার এসে আমাকে উদ্ধার করে।

মোকছেদা আরও বলেন, আল্লাহ আমারে জানে বাঁচাইছে। নইলে আজকে কোনোভাবেই বাঁচতাম না। অনেক লোক তীরে উঠতে পারে নাই। আমিও পারতাম না। হায়াত আছে দেইখা বাঁইচা গেছি। একটা বস্তা ধইরা ভাইসা ছিলাম।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ