বছরের সবচেয়ে উত্তম মাস রমজান। এই মাস মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুকম্পা ও নিয়ামত। এই মাসে অধিক পরিমাণে আমলের মাধ্যমে বিপুল সওয়াব অর্জন ও নেকি লাভের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
রমজানে সহজেই করা যায়, এমন কিছু আমল এখানে উল্লেখ করা হলো-
এক. তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম।
কোরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ০২)
দুই. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
তিন. ফিতরা দেওয়া
এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেওয়া আবশ্যক। ইবনে উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিলেন। (বুখারি, হাদিস :১৫০৩)
চার. অপরকে খাদ্য খাওয়ানো
রমজান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরিব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কোরআনে এসেছে, ‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে।’ (সুরা আদ-দাহর, আয়াত : ০৮)
এ বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.)মা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে আল্লাহর রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া।’ (বুখারি, হাদিস : ১২)
অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে, ‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন।’ (বাইহাকি, শুআবুল ইমান : ৩০৯৮)
পাঁচ. আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ০১)
আনাস ইবন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।’ (সহিহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩)
ছয়. কোরআন মুখস্থ বা হিফজ করা
কোরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কোরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কোরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী।’ (সুরা আল-হিজর, হাদিস : ০৯)
যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.)-এর মা থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কোরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯১৪)
সাত. আল্লাহর জিকির করা
এ বিষয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১১৩৪৫)
আট. মিসওয়াক করা
মিসওয়াকের প্রতি রাসুল (সা.) অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। (সহিহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদিস : ১৩৫)
নয়. একজন অপরজনকে কোরআন শুনানো
রমজান মাসে একজন অপরজনকে কোরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুল (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৯০২)
ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমজান অবধি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দুইবার শোনান ও শোনেন ।
দশ. কোরআন বুঝা ও আমল করা
কোরআনের এ মাসে কোরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কোরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ০৩)
কোরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমরা যখন নবী (সা.) হতে কোরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম।’ (শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০)