সুনামগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে নির্মাণ করা হয় রাণীগঞ্জ সেতু।
গত ৭ নভেম্বর সারাদেশে একযোগে একশ সেতুর সঙ্গে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতুরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন থেকেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেতুটি।
তবে উদ্বোধনের এক মাস পার হলেও জগন্নাথপুর-হবিগঞ্জ সড়কে চলছে না ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস। শুধুমাত্র কিছু কিছু পণ্যবাহী যানবাহন এবং ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করছে। সরু সড়ক ও দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু থাকায় বিকল্প এই রুট ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে জেলার দূরত্ব কমেছে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। এই সেতু চালু হবার পর রাজধানীতে যেতে যাতায়াত সময় কমেছে দুই ঘণ্টা। সেই সঙ্গে যাতায়াত খরচও কমার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। গণ-পরিবহনের ভাড়া কমেনি। এজন্য এর সুফলও এখনও ভোগ করতে পারেননি জেলাবাসী। কিছু পরিবহন বিকল্প পথে চললেও সেগুলোরও ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে।
সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর ওপর রানীগঞ্জ সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট। ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতু ও আড়াই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল।
চুক্তি অনুযায়ী ৭০২ দশমিক ৩২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থ সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ৬ বছরে এসে শেষ হয়। ফলে চলতি বছরে ৭ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয় সুনামগঞ্জবাসীর স্বপ্নের বহুল কাঙ্খিত রানীগঞ্জ সেতু।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীলরা জানান, ৪৬ কিলোমিটার পাগলা-জগন্নাথপুর-সৈয়দপুরের সড়কে বিভাগের দীর্ঘ রানীগঞ্জ সেতুসহ ৩৬ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ জেলার সীমানায় এবং বাকি ১০ কিলোমিটার হবিগঞ্জ জেলার সীমানায় পড়েছে। গেল সাত নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানীগঞ্জ সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।
এরপর এই সেতু ও সড়ক দিয়ে আন্তঃজেলা বাসসহ মালবাহী ট্রাক, কার্গো চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দুই দিন এই সড়কে বড় যানবাহন চললেও সাড়ে তিন কিলোমিটার সরু সড়ক ও দুটি বেইলি সেতুর কারণে এই পথ ব্যবহার করছেন না বড় যানবাহনের চালকরা।
সুনামগঞ্জ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সরকার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ করেছেন। কিন্তু তার সুফল সুনামগঞ্জবাসী পাচ্ছে না। এখনও দুটি পুরাতন বেইলি সেতু রয়েছে। সেই সেতুতে একটি গাড়ি প্রবেশ করলে অপরদিক থেকে গাড়ি অপেক্ষা করতে হয়। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও তিন কিলোমিটার সরু সড়কে ভোগান্তি রয়েছে। এ কারণে এইপথ দিয়ে বাস চলাচল করে না।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রথমে পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচলের জন্য নতুন রোড তৈরি করে ভাড়া নির্ধারিত করতে হবে। এরপর ভাড়া কমাবে পরিবহনগুলো।
সুনামগঞ্জের সচেতন মহলের একজন অ্যাড. মাহবুবুল হাছান শাহীন বলেন, কুশিয়ারা নদীর ওপর সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেতু হয়েছে, অথচ দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু নির্মাণ কাজ হচ্ছে না। এটি সমন্বয়হীনতার কারণেই হচ্ছে না। এ কারণে সুনামগঞ্জবাসী বিকল্প সড়কের সুবিধা পাচ্ছে না।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক শফীকুল ইসলাম রাসেল বলেন, এখনও বিকল্প পথে কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে। সেগুলো ঠিক হলে পরিবহন মালিকরা আমাদের ঢাকা অফিসে নতুন রোডের জন্য আবেদন করবেন। তখন যাচাই বাছাই করে অনুমোদন ও নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, বমবমি বেইলি সেতু ভেঙে নতুন করে করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়, সিলেট থেকে দরপত্র হয়েছে। আশা করছি আগামী জানুয়ারি মাসে এই সেতুর কাজ শুরু হবে। কাটাখাল সেতুটি একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও সেটি অনুমোদন হয়নি। এনায়েতগঞ্জ থেকে সৈয়দপুর অংশ হবিগঞ্জ জেলার সীমানায়। সেখানেও কাজ চলছে।