ঈদুল আজহাকে ঘিরে প্রতি বছরই জমে ওঠে পশুর হাট-বাজার। রাজধানী ঢাকায় ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় প্রধান ও স্থায়ী গাবতলী পশুর হাটে। ঈদকে সামনে রেখে গাবতলী হাটের প্রস্তুতি শেষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে কোরবানির পশু। এখন অপেক্ষা শুধু ক্রেতার।
ঈদের ১০-১৫ দিন আগেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের পাশে অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। পশু ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রস্তুতি থাকলেও অস্থায়ী হাটে নেই কোরবানির পর্যাপ্ত পশু। আর স্থায়ী হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় শুরু হয়নি।
ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী মঙ্গলবার-বুধবার নাগাদ জমে উঠবে পশুর হাট। তখন ক্রেতাদের চাহিদামতো হাটে উঠবে কোরবানির পশু। এবার বাড়তি দামের আশা তাদের।
শনিবার (২ জুলাই) গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির পশুর জন্য শেড নানা রঙের ত্রিপলে সাজানো হয়েছে। ধোয়া-মোছার কাজও চলছে। আকর্ষণীয় ডিজাইনে সাজানো হয়েছে প্রধান ফটক। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাবের জন্যও উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। তবে এখনো ব্যাংক, বিকাশ, রকেটের জন্যও বুথ তৈরি হয়নি।
হাটে কথা হয় কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী খোরশেদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে লোকসান হচ্ছে। এবার এখনো জমেনি পশুর হাট। মানুষ (ক্রেতা) আসছে, ঘুরছে, চলে যাচ্ছে। আমি ১১টি গরু এনেছি। একেকটির ওজন ৬ থেকে ১৩ মণ পর্যন্ত। দেড় লাখ টাকার নিচে কোনো গরু নেই। একেকটি গরুর পেছনে প্রতিদিন খরচ ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে খরচ করে যাচ্ছি, কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই। লস খেতে তো আর বিক্রেতারা গরু আনবে না। এবার গরু কম আসছে। আমরা যারা ১২ মাস ব্যবসা করি, তারাই আছি।
ঝিনাইদহের গরু ব্যবসায়ী লিটন বেপারি বলেন, হাটে এখন গরু-ছাগল কম। বেচাকেনা নেই। চারটি গরু এনে খরচ করেই যাচ্ছি। বিক্রি করতে পারিনি। গরু এনে রাখলেই খরচ।
কবে থেকে জমতে পারে গরুর এ স্থায়ী হাট- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী মঙ্গল-বুধবার থেকে জমবে হাট। আগে আগে অনেকবারই বেচাকেনা হয়েছে। আবার গতবছর গরু বেচতে না পেরে ফিরে গিয়েছিলাম। এবার মনে হচ্ছে হাট জমবে, তবে দেরিতে। তাই আশায় আছি।
আরও পড়ুন : শান্ত স্বভাবের সম্রাট নজর কাড়ছে সবার, দাম ১৮ লাখ
তিনি জানান, ঈদের খুব বেশি আগেই ঢাকার ক্রেতারা কোরবানির পশু কেনেন না। আগে খোলামেলা বাড়ি ছিল, এখন তা নেই। আগে কিনলে গরু-ছাগল রাখার জায়গা কোথায়? তাই শেষ মুহূর্তে জমে গরু-ছাগলের হাট। এখন যা হচ্ছে টুকটাক অনুষ্ঠান যেমন জন্মদিন, বিয়ে-বাড়ি আর কসাইখানার জন্য বিক্রি হচ্ছে।
আমিনবাজারের ছাগলের বেপারি মালু মিয়া বলেন, গরুর কেনাবেচা নেই বললেই চলে, যা হচ্ছে দুই-চারটা ছাগল বেচাকেনা চলছে। কোরবানির চাপ এখনো পড়েনি হাটে। ক্রেতা সমাগম হলেই কোরবানির স্পেশাল ছাগল নামাব। একেকটার ওজন থাকবে ৩০ থেকে ৪৫ কেজি।
গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটের পাশেই কোরবানির ঈদে জমে উঠে অস্থায়ী পশুর হাটও। সেখানে প্রধান ফটকের সামনেই ইট-বালুর ব্যবসা করেন মো. বুদ্দু মিয়া। তিনি বলেন, ইট-বালুর ব্যবসা গুটাইছি। এখন কোরবানির সময়। শেড বানাইছি। ঈদের ১০ দিন এ ব্যবসাই করব। অস্থায়ী হাটের শেড বহুদূর পর্যন্ত গেছে। কিন্তু এখনো হাট জমেনি। গরু-ছাগল আসতেছে, কিন্তু ক্রেতা নাই।