ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। প্রতি বছর ঈদের আগ মুহূর্তে সারাদেশে নানা আকৃতি ও দামের কারণে আলোচনায় আসে বাহারি নামের গরু। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ‘নড়াইলের টাইগার’। ৩৫ মণ ওজনের বিশাল আকৃতির সাদা-কালো রঙের ‘নড়াইলের টাইগার’ কিনলে মিলবে ১৫০ সিসির মোটরসাইকেল উপহার।
ষাঁড়টির মালিক সেলিনা বেগম উপযুক্ত দাম পেলে ক্রেতাকে মোটরসাইকেল উপহার দেবেন। পাশাপাশি নিজের ভাঙাচোরা টিনের ঘর মেরামত ও খামার বড় করে করার স্বপ্ন বুনছেন তিনি।
সেলিনা বেগম লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের চা বিক্রেতা মো. রবিউল ইসলামের স্ত্রী।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়ালঘরে গাভি, দেড় বছর বয়সী ছোট ষাঁড়ের পাশে অর্ধেক জায়গাজুড়ে রাজকীয় ভঙ্গিমায় গা এলিয়ে জাবর কাটছে নড়াইলের টাইগার। সকালে গোয়ালঘর থেকে তাকে বের করে বাড়ির উঠানে পরম যত্নে গোসল করান সেলিনা। গোসল করানোর সময় সেলিনা নির্দেশ দিচ্ছেন মাথা উঁচু করো, পেছনে যাও, দাঁত দেখাও। সে বাধ্য সন্তানের ন্যায় প্রতিটা কথা পালন করছে। শান্ত স্বভাবের নড়াইলের টাইগার যেন সেলিনার বাধ্যগত আরেকটা সন্তান।
ষাঁড়ের মালিক সেলিনা বেগম বলেন, সন্তানের যেমন নাম রাখে তেমনি আমি তার নাম রেখেছি। সন্তানের মতো পরম যত্নে তাকে তিন বছর ধরে লালন-পালন করছি। তাকে আমরা কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টা, ভাতসহ দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করেছি। কোনো ক্ষতিকর কিছু তাকে দেইনি। আমি মনে করেছি আমার অন্য চারটি সন্তানের মতো সেও আমার সন্তান।
ঈদের বেশি দিন বাকি নেই, যার কপালে আছে আল্লাহ যার জন্য কবুল করবেন তার ঘরে যেয়েই আমার নড়াইলের টাইগার কোরবানি হবে।
সেলিনা বেগমের ছেলে সেলিম বলেন, আমাদের নড়াইলের টাইগার গরুটি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের। তার বয়স ৩ বছর ৮ মাস। দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৬ ফুট, বুকের বেড় ৯ ফুট ৪ ইঞ্চি, উচ্চতা ৬ ফুট, ওজন প্রায় (লাইভ ওয়েট) ৩৫ মণ। আসন্ন কোরবানির ঈদে তাকে বিক্রির জন্য বাড়িতে রেখেই আমরা প্রস্তুত করেছি। আমার বাবা পঙ্গু। ছোট একটা চায়ের দোকান বাজারে, আমি কাজে থাকি। মূলত গরুটা আমার মাই দেখাশুনা করেন। ষাঁড়টিকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার টাকার খাবার খাওয়াতে হয়।
তিনি আরও বলেন, গোখাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে গরু পালন করা সত্যিই কষ্টসাধ্য। নড়াইল টাইগারের দাম আমরা প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ টাকা চাচ্ছি। তবে ক্রেতার দর-দামের সুযোগ আছে। উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারলে ক্রেতাকে ১৫০ সিসির সিঙ্গেল ডিস্কের একটি পালসার মোটরসাইকেল উপহার দিব।
দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) জান্নাত মৃধা বলেন, আমার প্রতিবেশী সেলিনা বেগমের পরিবার অতটা সচ্ছল নয়। ‘নড়াইলের টাইগার’ ষাঁড়টিকে তারা পরম যত্নে লালন-পালন করেছেন। নড়াইল ও যশোরে এত বড় গরু সচারাচর দেখা যায় না। এই ষাঁড়টির ন্যায্যমূল্য পেলে তারা গরুর খামারের প্রতি আগ্রহী হবে।
দর্শনার্থী জাহিদ খান বলেন, শুনেছি অনেক বড় একটি গরু আছে, তাই দেখার জন্য বেশ দূর থেকে আসছি। এত বড় গরু আশপাশের জেলায় তেমন একটা দেখা যায় না। এত বড় গরু কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু দেখে খুবই ভালো লাগছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো আবু তালেব বলেন, সেলিনা বেগমের প্রায় ৩৫ মণ ওজনের নাড়াইলের টাইগার নামক ষাঁড়টি জেলার এবারের সবচেয়ে বড় ষাঁড়। আমাদের তথ্য ও হিসাব মতে এতে শুধু মাংসই হবে প্রায় ২৩ মণ। আমারা খামারিদের নিয়মিত মনিটরিং ও সার্বিক সহায়তা দেওয়ায় খামারে ছোট-বড় গরুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এত বড় গরু জেলায় বিক্রি না হলেও আমরা অনলাইনের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে সারাদেশের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।
তিনি আরও বলেন, জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু মজুত আছে ৫৪ হাজার ৪৯০টি। কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩২ হাজার ১৪৫টি। অর্থাৎ ২২ হাজার ৭৭৫টি গবাদি পশু উদ্বৃত রয়েছে। যা চাহিদা অনুযায়ী অন্য জেলাগুলোতে বিক্রি করা সম্ভব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের কোরবানিতে নড়াইলের তিনটি উপজেলা নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়ায় ৪ হাজার ৫৯৯টি খামারে মজুত থাকা গবাদি পশুর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১২ হাজার ৯৫৮টি, বলদ ২ হাজার ৫৭১টি এবং গাভি রয়েছে ৪ হাজার ১৬৯টি। মোট গরুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৯৮টি। এছাড়া ছাগল এবং ভেড়া রয়েছে ৩৫ হাজার ১৯২টি। যার মধ্যে ছাগল ৩৫ হাজার ১০৩টি এবং ৮৯টি ভেড়া রয়েছে।