চীন : ব্যাপক বিক্ষোভের পর গুয়াংজুতে শিথিল করোনাবিধি

সরকারের নেওয়া কঠোর করোনানীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গুয়াংডংয়ের রাজধানী গুয়াংজুসহ বিভিন্ন জেলায় করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

বুধবার গুয়াংজুসহ হাইঝু, বাইয়িউন, ফানইয়ু, তিয়ানাহে, কংঘুয়া, হুয়াদু ও লিওয়ান জেলায় করোনা বিধি শিথিল করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

কয়েকদিন আগে গুয়াংজুতে কয়েকজন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর শহরজুড়ে লকডাউন জারি করে প্রাদেশিক সরকার। রাজধানীতে লকডাউনের আগে প্রদেশের অন্যান্য জেলাতেও লকডাউন চলছিল।

চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর গুয়াংজু একটি বর্ধিষ্ণু শহর। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর থাকায় শহরটিতে প্রচুরসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক থাকেন। এছাড়া চীনের অধিকৃত অঞ্চল হংকংয়ের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই শহরটির আলাদা গুরুত্বও রয়েছে।

১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত এই শহরটির বড় অংশই শ্রমিক। লকডাউনে বন্দর, কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের প্রায় সবাই ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন।

মঙ্গলবার রাতে গুয়াংজুতে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা। পুলিশ ও করোনা রক্ষীবাহিনীর লোকজন পরিস্থিতি শান্ত করতে এলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় লকডাউনবিরোধীদের।

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংঘর্ষের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। সেসব ছবি-ফুটেজে দেখা গেছে— বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর সদ্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন।

কয়েকটি ফুটেজে অবশ্য বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশের গাড়িতে ওঠানোর দৃশ্যও দেখা গেছে।

মঙ্গলবার রাতের বিক্ষোভের পর বুধবার গুয়াংডং প্রাদেশিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজধানীসহ প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণা করে নোটিশ দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

মহামারির শুরু থেকেই করোনার বিস্তার রোধ করতে মাসের পর মাস লকডাউন, কোরেন্টাইন ও ভ্রমণবিধি, বাধ্যতামূলক করোনা টেস্টসহ বিভিন্ন কঠোর নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ-মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকার। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে চীনে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর হার এখনও অনেক কম।

কিন্তু সরকারের এসব নীতির কারণে ব্যাপক ভোগান্তি ও দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। মাসের পর মাস লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন জারি থাকায় দেশটির অনেক শ্রমজীবী তাদের আয়ের সংস্থান যেমন হারিয়েছেন, তেমনি বিদেশি অনেক কোম্পানি চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

এর মধ্যেই কয়েকদিন আগে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের উরুমকি শহরে একটি বহুতল বাসভবনে আগুন লেগে ১০ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে বিলম্ব হয়েছে। যদি বিলম্ব না হতো, তাহলে এই নিহতের ঘটনা ঘটত না।

তারপর থেকেই লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে রাজধানী বেইজিংসহ বিভিন্ন শহরে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ