চারদিকে তখন দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি। জোয়ারে বেড়িবাঁধে পানি ছুঁই ছুঁই। পানিতে ডুবে গেছে ঘর। কোনো রকম চৌকিতে ঠাঁই নিয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা ফারজানা আক্তার (৩৩)।
নোয়াখালীতে তখন ৭ নম্বর বিপদ সংকেত। সবাই ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এমন দুর্যোগের মধ্যে গত রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে প্রসব বেদনা ওঠে ফারজানার। জোয়ারের পানিতে চৌকি ডুবে যাবে এমন সময় ধাত্রীর সহযোগিতায় জন্ম নিলো এক কন্যা সন্তান। পরক্ষণেই নাম রাখা হলো জান্নাতুল ফেরদৌস সিত্রাং।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতির কথা খুলে বলেন ফারজানা আক্তার। তিনি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের বয়ারচর এলাকার মো. শরিফ উদ্দিনের স্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বামী নদীতে কাজ করে। ঘরে পুরুষ কেউ নাই। জোয়ারের পানি আমাদের ঘরে প্রবেশ করেছে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। চৌকির ওপরে আশ্রয় নিয়েছি। প্রসব বেদনায় মনে হয়েছে আর বাঁচবো না। কেউ পাশে নেই। এক ধাত্রীর সহযোগিতায় আমার কন্যার জন্ম।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমার মেয়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় জন্ম নিয়েছে তাই তার নাম রেখেছি সিত্রাং। কোথাও নেটওয়ার্ক নাই তাই কাউকে জানাতে পারি নাই সন্তানের কথা। আমার ৩টা ছেলের পর রাজকন্যা সিত্রাংয়ের জন্ম। জোয়ার নামলেও এখনো রাতের কথা মনে পড়লে শিউরে উঠি।
সিত্রাংয়ের নানি রাহেনা আক্তার বলেন, ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। চৌকির ওপরে ধাত্রী আর আমার মেয়েকে উঠাইসি। আমরা চারপাশে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নদী ভাঙা লোক তাই কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই।
সিত্রাংয়ের দাদি নুর জাহান বলেন, তুফানের দিন নাতিন হইসে। আমরা ডাক্তারের কাছে নিতে পারি নাই। নরমালে হইসে। বেড়ির কাছে থাকি আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। যদি সরকার নদী ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতো তাহলে এখানে থাকতে পারতাম। নইলে আর জায়গা কিনের টাকা নাই।
হরণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসাইন বলেন, আমি যখন খবর পেয়েছি তখন স্থানীয় ইউপি সদস্যকে তাদের বাড়িতে যেতে বলছি। তিনি বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। এই দুর্যোগে বাচ্চা প্রসবের পর বর্তমানে মা ও শিশু সুস্থ আছে। আমি তাদের সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেব। সিত্রাং ও তার মা ফারজানার সুস্থতা কামনা করছি।