রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় ‘গৃহবন্দি’ থাকা ১৯ বছর বয়সী সেই তরুণী গতকাল কানাডা চলে গেছেন।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য জানানো হয়। রিটের পক্ষের এক আইনজীবী আদালতে এসে তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় ‘গৃহবন্দি’ থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে দেশটির সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিনই হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানীর তত্ত্বাবধানে তরুণীকে কানাডিয়ান হাইকমিশনে পৌঁছে দেওয়া হয়। আদালত আদেশে তরুণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেন। তরুণীর বাবা-মা দেখা করতে চাইলে সেই ব্যবস্থা করতে কানাডিয়ান হাইকমিশনকে বলা হয়। এরপর থেকে তরুণী কানাডার হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। গতকাল তাকে কানাডা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওইদিন চোখের জলে ১৯ বছরের মেয়েকে হাইকোর্ট থেকে বিদায় জানান তার বাবা। আদালতের এজলাস কক্ষে মেয়েকে জড়িয়ে কান্না করেন বাবা। মেয়েও জড়িয়ে ধরেন বাবাকে।
বাবা আদালতকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, আমার মেয়ে কানাডা চলে যাচ্ছে। এতে আমার দুঃখ নেই। যেখানেই যাক আমার আদরের মেয়ে ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক- এটাই আমার চাওয়া। আমার মেয়ের পড়াশুনা নিয়েও মাথা ব্যথা নেই। আমার মেয়ে যেন চিকিৎসা পায়, মেয়ে আমার বেঁচে থাকুক এটাই চাওয়া।
হাইকোর্ট তরুণীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা চাই তুমি কানাডায় ভালোভাবে পড়ালেখা করে বাংলাদেশের ভাবর্মূতি উজ্জ্বল করবে। আমরা যেন তোমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। বাবা মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।
ওই দিন আদালতে তরুণীর বাবা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ এপ্রিল কানাডা হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা, থাকা খাওয়ার খরচ বহনসহ সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে কানাডা সরকার। হাইকোর্টকে লিখিতভাবে কানাডা হাইকমিশনের পক্ষে এ তথ্য জানান রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। পরে বিচারপতিরা এজলাস কক্ষে একান্তে তরুণীর কথা শোনেন।
গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ১৯ বছরের তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানি ও মা সবসময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।