চারদিকে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। নতুন ফসলে ভরে উঠেছে বাড়ির উঠানসহ মাঠ-ঘাট। কৃষকরা যখন ফসল ঘরে নিয়ে যেতে ব্যস্ত, তখন ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করছে বায়েজিদ (৭) ও আলমগীর (১২) নামে দুই শিশু। গর্তে পাওয়া ধান বেচে শীতের কাপড় কেনার ইচ্ছা তাদের।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের গেওরানদী গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুর রহমানের ছেলে বায়েজিদ ও দিনমজুর আকতারুল ইসলামের ছেলে আলমগীর। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
বায়েজিদ স্থানীয় রাতোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ও আলমগীর রাতোর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এক সপ্তাহ ধরে স্কুল শেষে বাসায় আসার পর ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করার জন্য মাঠে যাচ্ছে তারা।
মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বায়েজিদ একটি বস্তা ধরে আছে। মাটি খুঁড়তে ব্যস্ত আলমগীর। কিছুটা খনন করার পর দেখা যায় ধানের শীষের জটলা। আর এ জটলা দেখে দুজনের মুখে আত্মতৃপ্তির হাসি।
এ বিষয়ে আলমগীর কথা বলতে না চাইলেও সঙ্গে কথা বলে বায়েজিদ৷ সে বলে, স্কুল শেষ করে আমরা দুজনে চলে আসছি। গতবার অনেকগুলো ধান পাইছিলাম৷ এবারও অনেক পাইছি। আরও পাঁচ দিন ধান জড়ানোর (সংগ্রহ) পর একসঙ্গে করব। তারপর সেগুলো বাজারে বিক্রি করব। যে টাকাটা হবে সেটা দুজনে ভাগ করে নেব। আমরা এবার এই টাকা দিয়ে নতুন জ্যাকেট (সোয়েটার) কিনব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীরের বাবা আক্তারুল ইসলাম বলেন, অভাবের সংসার। দিনে আনে দিন খাই। ওদের ধানগুলো বেচে ওরা খাবার খায়। কিছু কিনতে চাইলে কিনতে পারে। আমার কাছে টাকা চাইতে আসে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। সেই ধান থেকে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হবে।
ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করা বিপজ্জনক জানিয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, এভাবে ধান সংগ্রহ করা বিপজ্জনক। গর্তে পোকামাকড় থাকার সম্ভাবনা বেশি। হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।