:: খলিফা নাসির উদ্দিন ::
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে রান্না শেখার গুরুত্বকে ছোট করে দেখা বা ট্রল করার বিষয়না। জীবনে কখনো রান্না করে খেতে হবেনা বলে রান্না শেখা যাবেনা এমনটা ভাবা এযুগে একেবারেই বোকামী। চাকরীর সুবাদে ২০১৯ সালে আমাকে কক্সবাজারে ব্যাচেলর বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। আমার মা বাবা, স্ত্রী সন্তান, ভাই বোন আমাকে ভীষন টেনশনে। জীবনে রান্না করিনি। হোটেলে ৩ বেলা খাওয়াতো সম্ভব না। ঠেকলে মাঝে মধ্যে খাওয়া যেতেই পারে। আমি আমার বস বায়েজিদ ভাইকে জানালাম আমি রান্না করতে পারিনা। ঢাকার মত কক্সবাজারে রান্না করে দেওয়ার কাজের লোক সহজলভ্য না। সুতারাং আমার কাজ আমাকেই করতে হবে। আমি কখনো জীবনে রান্না করাতো দূরের কথা রান্না করতে কি লাগে তাই জানতামনা। বস ৩ রুম নিয়ে একা একটা ফ্ল্যাটে থাকতেন। তিনি আমাকে একটা রুমে থাকা ও তার সাথে খাবার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেন। সাথে আমার আরেক কলিগ জামাল ভাইকে নিয়া বসের ওই বাসায় থাকতে শুরু করি।
বস রান্না করে আর আমরা খাই বিষয়টা আমার কাছে অশোভনীয় মনে হলো। বেয়াদবী হচ্ছে বসের সাথে এমন ভেবে তাকে প্রথম দিকে পিয়াজ রোশন, তরকারী কাটায় সহযোগিতা শুরু করি। কিনতু এভাবে বসের উপর কতদিন। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছেনা আমার কাছে। যদিও বস রান্না করে খাওয়াটা খুবই এনজয় করতেন।
আমি ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছি। বস যখন রান্না করে তখন তার পাশে দাড়িয়ে থেকে রান্নার কৌশল রপ্ত করার চেস্টা করি দেখে বস ভাত রান্না করতে গেলে ৩ জনে ( যেহেতু আমরা ৩ জন ছিলাম) কতটুকু চাল, পানির পরিমান কতটুকু লাগবে তা দেখালেন। এরপর তিনি দাড়িয়ে থেকে আমাকে রান্নার উপকরন তৈরী ও কৌশল হাতে কলমে শিখালেন। এভাবে তার কাছ থেকে মাছ, মাংশ অন্যান্য তরকারী রান্না করা শিখে নিলাম।
তখন বুঝলাম রান্না শেখা কতটা গুরুত্ব ছিলো আমাদের জীবনে। আমার ৩ সন্তান। ৩ জনেই রান্না করতে জানে।
রান্না শিখলে বাবুর্চি হতে হবে বা শেফ হতে হবে তাচ্ছিল্য করে এমনটাও বলছেন কিছু অভিভাবক যা কাম্য নয়।
ওই অভিভাবক হয়তো জানেন না রান্না শিখতে এখন হাজার হাজার ছেলে মেয়েরা হোটেল ম্যামেজমেন্ট এ ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। একজন শেফ বাংলাদেশে জব করলেও ন্যুনতম বেতন পাবেন ৬০- ১ লাখ টাকা।তাই সন্তানদের শুধু রান্না কেন- সকল কাজ নিজ হাতে করানো শিক্ষা দেওয়া ছোট বেলা থেকেই করা আমাদের সময়ের দাবী বা নৈতিক দায়ীত্ব।
চায়না জাতি এত উন্নত হওয়ার কারন হলো তাদের মা বাবা শিশুদের ছোট বেলা থেকে নিজ হাতে খাওয়া, কাপড় পড়া, জুতা পড়া, জুতার ফিতা বাধা, গোসল করা, নখ কাটা, রান্না করা, সাতার শেখা, নিজের বিছানা গোছানো ও বাজার করা ছাড়াও দেশের প্রতি ভালোবাসা, মানুষকে সন্মান শ্রদ্ধাবোধ শিখানোর মাধ্যমে আত্ন নির্ভরশীল জাতি হিসাবে গড়ে তোলার আপ্রান চেস্টা করা হয় শিশুকাল থেকেই। অথচ আমরা এর বিপরীতে। ফলে আমাদের শিক্ষা শুধু পুথিগত শিক্ষার ভারেই চাপা পড়ে আছে। তাছাড়া বিশ্বের সাথে তাল মিলায়ে চলতে পারছেনা আমাদের সন্তানরা। সরকার যখন বিশ্বের সাথে আমাদের সন্তানদের বিশ্ব উপযোগী দক্ষ মানব হিসাবে গড়ে তুলতে উদ্দোগ নিয়েছেন তখন একটি মহল জানিনা কি কারনে এটাকে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আসুন আমরা আমাদের সন্তানকে দক্ষ, উন্নত ও আত্ন-নির্ভরশীল জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে শিশুকাল থেকেই স্বাবলম্বীকরন পারিবারিক শিক্ষায় মনোযোগী হই।
লেখক: সমাজ সেবক, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।