যুবককে হত্যার দায়ে ৩ বন্ধুর যাবজ্জীবন

লক্ষ্মীপুরে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করার পর গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে মেহেরাজ হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার দায়ে ৩ বন্ধুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আবদুল্লাহ আল মামুন, সজিব আহম্মদ ও তানভীর হোসেন বিজয়। মামুন নোয়াখালীর সুধারাম থানার উত্তর হুগলি গ্রামের মো. ইউছুফের ছেলে, সজিব একই থানাধীন মাতাহাপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ও বিজয় রাওয়াল দিয়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি নামে একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের জের ধরে মেহেরাজকে হত্যা করা হয়েছে। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রায়ের পর আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামি বিজয়ের মা সেলিনা বেগম ও সজিবের মা রোকেয়া খাতুন। রোকেয়া খাতুনের দাবি, তার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ তার ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

আসামি তানভীর হোসেন বিজয়ের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, কথিত প্রেমিকা বৃষ্টিকে সাক্ষীর তালিকায় রাখা হয়নি। তার সঠিক পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। প্রধান আসামি মামুনের জবানবন্দির ভিত্তিতে আদালত রায় দিয়েছে। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট নয়। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করি সেখানে আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হবো।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামুনের সঙ্গে নোয়াখালী সদর উপজেলার মুন্সি তালুক এলাকার বৃষ্টি নামে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভিকটিম মেহেরাজও ওই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেষ্টা করে। বিষয়টি জেনে মামুন তার বন্ধু সজিব ও বিজয়কে ডেকে নিয়ে মেহেরাজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এজন্য সজিব ও বিজয়কে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মামুন।

মামুন কৌশলে লক্ষ্মীপুরের চরশাহী ইউনিয়নের দাশের হাট এলাকা থেকে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে বলে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘোরাফেরা শেষে সন্ধ্যায় মেহেরাজ নোয়াখালীর উদয় সাদুর হাটে যায়। সেখানে মামুন একটি বস্ত্র বিতানে চাকরি করতেন। সেখানে গেলে মেহেরাজকে সজিব ৫০০ টাকা দেয়। এক পর্যায়ে মামুন ও সজিব স্থানীয় একটি ফার্মেসি থেকে নেশা জাতীয় ওষুধ, কনফেকশনারি দোকান থেকে ৫টি স্পিড (কোমল পানীয়) ও দুটি বস্তা ক্রয় করেন।

পরে একই মোটরসাইকেলে করে মামুন, সজিব, বিজয় ও মেহেরাজ মুন্সি তালুক গ্রামে একটি ধান ক্ষেতের পাশে গিয়ে বসে। সেখানে স্পিডের সঙ্গে নোশা জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে মেহেরাজকে খাওয়ানো হয়। পরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কোমড়ের বেল্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেহেরাজকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ বস্তাবন্দি করে মামুন ও বিজয় লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের টক্কারপুল এলাকায় ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়।

এদিকে মেহেরাজকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি তার ভাই মাহবুবুর রহমান সুধারাম থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে টক্কারপুল ব্রিজের নিচ থেকে দাসেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা মেহেরাজের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে ২ মার্চ মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০২০ সালের ৩০ মে তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দ্রগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজ উদ্দিন আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেয়।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ