টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, ৪ সন্তান নিয়ে চা-শ্রমিকের মানবেতর জীবন

প্রতিদিনের মতো চা-বাগানে পাতা তুলছিলেন শ্রমিক আইয়ুব আলী। হঠাৎ চা-পাতার ঝুঁড়ি নিয়ে পড়ে যান ড্রেনে। এতে গলা ও মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। কথা বলতে পারলেও পুরো শরীর নিস্তেজ। বিছানায় পড়ে আছেন দুই মাস ধরে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্ত্রী ও চার সন্তানের দিন কাটছে অনাহারে।

চা-শ্রমিক আইয়ুব আলী (৪০) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের ময়নাগুড়ী গ্রামের মৃত নবাব আলীর ছেলে।

আইয়ুব আলীর বাড়িতে দেখা যায়, নিস্তেজ দেহ নিয়ে পড়ে রয়েছেন বিছানায়। প্রস্রাব-পায়খানা সারতে হচ্ছে নলের সাহায্যে। কথা বলতে পারলেও কোনো নড়াচড়া করতে পারছেন না। গলা থেকে পুরো শরীর নিস্তেজ।

আইয়ুব আলীর স্ত্রী সাহেদা খাতুন বলেন, অসুস্থ্ স্বামী নিয়ে খুব কষ্টে দিনযাপন করছি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে কষ্ট হচ্ছে। ধারদেনাসহ বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করে অপারেশন করাতে পারলেও এখন ওষুধ কিনতে পারছি না। চা-বাগানে কাজ করেই সংসার চলত। এখন তিনি বিছানায় পড়ে থাকায় চার ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো খাওয়াতে পারছি না। কেউ যদি সহযোগিতা করতেন, তাহলে খুবই উপকার হতো।

আইয়ুব আলীর ছোট ভাই আলমগীর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ সকালে এলাকার একটি চা-বাগানে পাতা তোলার কাজে যান বড় ভাই আইয়ুব আলী। আমিও তার সঙ্গে চা-পাতা তোলার কাজ করছিলাম। বাগানে চা-পাতা তোলার পর পাতাগুলো কাপড়ের ঝুঁড়িতে করে মাথায় নিয়ে রাস্তার এক পাশে স্তূপ করতে আসছিলেন। আসার সময় হঠাৎ বাগানের ড্রেনের ভেতর পা পিছলে পড়ে গুরুতর আহত হন। সেখান থেকে দ্রুত তেঁতুলিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। রংপুরে যাবতীয় পরীক্ষা করার পর চিকিৎসকরা জানায়, তার গলার হাড়সহ মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বাড়ির বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে রংপুর প্রাইম মেডিকেলে অপারেশন করা হয়। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকার বেশি। অপারেশন করা গেলেও ডাক্তাররা সময় বেধে দিয়েছেন ছয় মাস। প্রতি মাসে যেতে হবে চেকআপ করাতে। কিন্তু অর্থাভাবে ঠিকমতো ওষুধ কিনতে পারছেন না।

চা-শ্রমিকদের সর্দার সুজন বলেন, ঘটনার দিন আমরা একসঙ্গে চা-পাতা তুলছিলাম। পাতা মাথায় নিয়ে আসার সময় ড্রেনে পড়ে তার গলার হাড়সহ মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। আমরা আইয়ুব ভাইকে রংপুর প্রাইম মেডিকেলে নিয়ে অপারেশন করিয়েছি। কিন্তু এখন ওষুধ কেনার টাকা নেই। ঘরে শয্যাশায়ী হয়ে থাকায় চার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার পারিবারিক অবস্থা করুণ। চা-বাগানে পাতা তুলে চলতো সংসার।

শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, চা-পাতার ঝুঁড়ি নিয়ে ড্রেনে পড়ে আইয়ুব আলীর গলা ও মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার খবর শুনে তাকে দেখতে যাই। রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা শেষ করে দিয়েছে পরিবারটি। এখন তাদের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। মানবিকভাবে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে তার চার শিশুসন্তানের মুখে ফোটাতে আমি নগদ অর্থসহ কয়েক দিনের চলার মতো খাবার কিনে দিয়েছি। কিন্তু তাকে বাঁচাতে প্রয়োজন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এজন্য উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের সঙ্গে কথা বলেছি। আর সমাজের বিত্তবানসহ প্রশাসনের কাছে এ অসহায় চা-শ্রমিকের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ