দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয় বছরে ৬৫ কেজি!

বিশ্বে প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয় তার একটি বড় অংশ মাঠ থেকে আর খাবার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায় না। উচ্ছিস্ট হিসেবে অপচয় হয়ে যায়। খাদ্য অপচয়ের ক্ষেত্রে উন্নত, উন্নয়নশীল আর অনুন্নত কেউই বাদ যায় না বাংলাদেশেও প্রতি বছর যত খাবার উৎপাদন হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো তারও একটি বড় অংশ নষ্ট হয়ে ভাগাড়ে যায়।

২০২১ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইউনেপ ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে অনেক বেশি। খবর বিবিসি বাংলার।

ইউনেপের ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশে খাবারের এত অপচয় কেন হয়? কিভাবেই বা সেটি ঠেকানো যাবে? এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।

এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ খাদ্য অপচয় হয় বাংলাদেশে।

খাদ্য অপচয় বলতে কী বোঝায়?

উৎপাদনের শুরু থেকে অর্থাৎ সেটি মাঠে শস্য উৎপাদন হোক কিংবা সবজি, ফল, মাংস, ডিম বা দুধ যাই হোক না কেন, সেটি মানুষের খাবারের প্লেটে যদি না পৌঁছায়, অথবা প্লেটে পৌঁছেও নষ্ট হয় তবে সাধারণভাবে তাকে খাদ্য অপচয় বলা যায়।

উৎপাদনের পর যদি সেটি খাওয়ার যোগ্য না হয়, মানে সেটি যদি পচে যায়, বা মান সম্পন্ন না হয়, সেটিও খাদ্য অপচয় বলে গণ্য হয়।

ইংরেজিতে বিষয়টি বোঝানোর জন্য ‘ফুড লস’ এবং ‘ফুড ওয়েস্ট’ দুইটি শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলায় এ দুইটিকেই খাদ্য অপচয় বলে বর্ণনা করা হয়।

২০২১ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও বাংলাদেশে একটি গবেষণা চালায় যাতে বলা হয়, বাংলাদেশে উচ্চ আয়ের পরিবারে বেশি খাদ্য অপচয় হয়।

ওই গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান ।

তিনি বলেছেন, তাদের গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন উচ্চ আয়ের পরিবারে এক মাসে মাথাপিছু ২৬ কেজি খাদ্য অপচয় হয়। সে তুলনায় মধ্য এবং নিম্ন আয়ের পরিবারে অপচয় কম হয়।

কিভাবে নষ্ট হয়?

অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশে কয়েকটি ধাপে খাদ্য অপচয় হয়। তবে ফসলের ক্ষেত থেকে খাদ্যসামগ্রী বাজারে এসে পৌঁছানোর মধ্যবর্তী পর্যায়ে সবচেয়ে বড় অপচয়টি হয়। এর মধ্যে ফসল তোলার পর্যায়ে এক ধরণের অপচয় হয়, এরপর মজুদ বা সংরক্ষণ করা এবং ব্যাপারীর মাধ্যমে সেটি বাজারজাত করার সময় আরেকবার অপচয় হয়।

এরপর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যখন বড় শহরে ফসল, সবজি ও ফল, মাংস, ডিম, বা দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আসে তখন আরেক দফায় অপচয় হয়।

কারণ হিসেবে অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেছেন, দেশে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কম, ফলে মাঠ থেকে ফসল তোলা, প্রক্রিয়াকরণ এবং মজুদ, তারপর সেগুলো বাজারে পরিবহন-এর প্রতিটি পর্যায়েই অপচয় হয়।

এফএও’র গবেষণায় দেখা গেছে, শস্যদানা মানে চাল, গম ও ডাল এসব উৎপাদন থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই প্রায় ১৮ শতাংশ অপচয় হয়। ফল আর সবজির ক্ষেত্রে অপচয় হয় ১৭ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।

কেন মাথাপিছু খাদ্য অপচয় এত বেশি?

বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা এখন মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশে মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের যে হিসাব তা যথেষ্ট বেশি বলে মনে করেন গবেষকেরা।

অধ্যাপক হাসান মনে করেন, বাংলাদেশের কৃষিতে প্রযুক্তির কম ব্যবহার, সংরক্ষণের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকা, এবং বিকল্প সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাই খাদ্য অপচয়ের প্রধান কারণ।

তিনি বলেন, কৃষক যদি তার উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ ঠিকমত না করতে পারে তাহলে তার ক্ষতি হবেই। ধরুন, কোল্ড স্টোরেজ না থাকার কারণে তাকে হয়তো শাক আজকেই বিক্রি করতে হবে, কিন্তু বিক্রি না হলে সেটা পুরো নষ্ট হয়ে গেল।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

আপনার মতামত প্রকাশ করুন

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ