টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট। সময়ের বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকায় বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। বিশেষজ্ঞদের মতে বন্যা পরবর্তী সময় হচ্ছে কবলিত অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
সরেজমিনে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপাড়, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলাসহ বন্যাকবলিত এলাকার বেশিরভাগ বাসা থেকে এখনো পানি নামেনি। এসব এলাকার মানুষ এখনো ঘর ধোয়ামোছা ও বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত।
নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালাম খান বলেন, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ঘরবাড়ি ধোয়া-মোছাসহ বাড়ির আঙিনায় ছিটিয়ে দিচ্ছি। বন্যার পানি চলে গেলেও প্লাবিত জায়গা থেকে এখনো খুব দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর যেখানে পানি রয়েছে সেখানে পা দিলেই শরীরে চুলকানি হচ্ছে।
অন্যদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিস থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৩২৪।এর বিপরীতে মৃত্যু হয়নি কারও।
স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিসের পরিচালক ডাক্তার হিমাংশু লাল রায় বলেন, এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল। বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় অফিস অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
এই সময়ে পানিবাহিত রোগসহ বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। সিলেটের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম কাজ করছে।
তারা এসব এলাকায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে। সব ইউনিয়ন-পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে কোনো মানুষকে বন্যা পরবর্তী সময়ে ভোগান্তি পোহাতে না হয়। আর গত এক সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যানের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এটি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। বন্যা ছাড়াও এই মৌসুমে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এরকমই থাকে।
সিলেট জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, বন্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বক্ষণিক উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ৬ লাখ ৬৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন উপজলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় বিতরণ করেছি। তার মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ট্যাবলেট সিলেট সিটি করপোরেশনে বিতরণ করেছি। এ ছাড়া ১৪০০ জেরিকন, ৯০০ ট্যাপসহ বালতি, ৫৫০ স্যানিটারি ন্যাপকিন, ৫০০ বসার টুল বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে এবং ৩৪১টি নলকূপ আমরা উঁচু করেছি।
প্রতিটি উপজেলায় ১৫ সেট নলকূপ করার জন্য উপকরণ উপজেলা ভান্ডারে রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে আমরা প্রতিদিন গড়ে ৩২ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি আমরা বিতরণ করছি।